নিউজ ডেস্ক: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ ১৮৬ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে রাজি হওয়ায় আটদিন পর পরীক্ষামূলকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (৮ মার্চ) রাত থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু করেছে ঠিকাদার এমপিএমঅ্যান্ডপি (উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রভিশনিং সার্ভিসেস) চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনার দাবিতে গত ১ মার্চ থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখে।
এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পেট্রোবাংলার একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং গত অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকার উপরে মুনাফা করেছে। এরপরও কেন ঠিকাদারের পাওনা যথা সময়ে পরিশোধ করা হলো না? বারবার কয়লা উত্তোলন বন্ধ করা হচ্ছে কার স্বার্থে? খনি পরিচালনা পর্ষদ পর পর চারটি বোর্ড সভায় কী কারণে ঠিকাদারের পাওনা আটকে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল? টাকা যখন দিতেই হবে, যথা সময়ে দেওয়া হলো না কেন? আট দিন কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হলো এর দায় কে নিবে?
জানা যায়, বড়পুকুরিয়া খনির প্রোডাকশন, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম খনি কর্তৃপক্ষের কাছে রিটেনশন (জামানত) বাবদ ১৩০ কোটি টাকা এবং যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ৫৬ কোটি টাকা সবমিলে ১৮৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ পাওনা ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট শেষ হওয়া দ্বিতীয় দফা চুক্তি হয়। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসের উৎপাদন বিলের ১০ শতাংশ রিটেনশন (জামানত) বাবদ কর্তন করে রাখা হতো।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুদসহ জামানতের অর্থ ও মাইনিং ইক্যুবমেন্ট বাবদ পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে আলটিমেটাম দিয়ে ১ মার্চ থেকে নতুন ১৩০৮ নম্বর কোল ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখে। সেই সঙ্গে অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে খনির প্রায় এক হাজার দেশীয় শ্রমিকের ফেব্রুয়ারি মাসের পুরো বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) কয়লা খনির বোর্ড সভায় ঠিকাদারের বকেয়া পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। দু-তিন দিনের মধ্যে মোট পাওনার এক-তৃতীয়াংশ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট টাকাও খুব শিগগির পরিশোধ করা হবে। বিষয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামকে জানানো হলে শুক্রবার রাত থেকে তারা পরীক্ষামূলকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খনির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ‘গত বছরের ১৯ জুলাই খনির ইয়ার্ড থেকে প্রায় ২৩০ কোটি টাকার এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাও বা পদ্ধতিগত লোকসান হওয়ার ঘটনাটি ধরা পড়ে। কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনায় একটি বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটিসহ চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরমধ্যে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মাহবুব ছরোয়ারের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটি, পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন-ডিজি) খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি এরইমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।’
‘বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনে ঘাটতির জন্য অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে কয়লা উত্তোলন ও মজুদে আদ্রতার বিষয়টি উঠে আসে। আদ্রতার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে আমলে নিয়ে খনির পরিচালনা পর্ষদ পর পর চারটি বোর্ড সভায় ঠিকাদারের বকেয়া পাওনা আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। হঠাৎ করে খনির পরিচালনা পর্ষদ সে অবস্থান থেকে সরে আসায় ওই কর্মকর্তারা অবাক হন।’
Be the first to comment