নিজস্ব প্রতিবেদক:
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সুফল না পেলেও আমদানি ঘাটতি মোকাবিলায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চায় সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) গণশুনানিতে প্রশ্ন তোলা হয়, সুন্দরবনের বিতরণ এলাকার মানুষ এই দাম বৃদ্ধির কোনও সুফল পাবে কি না। আর যদি না পায় তাহলে ওই এলাকার মানুষকে কোন যুক্তিতে বর্ধিত দাম দিতে হবে?
রাজধানীর কাওরানবাজারে টিসিবি ভবনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গ্যাস দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে এসব প্রশ্ন তোলা হয়।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে গতকাল সোমবার থেকে চার দিনব্যাপী গণশুনানি শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এই শুনানি শেষ হবে।
খুলনা ও বরিশালে গ্যাস বিতরণের স্বপ্ন নিয়েই সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গঠন করা হয়। খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হলেও এখনও সেভাবে বিতরণ শুরু হয়নি। আর বরিশাল অঞ্চলে এখনও পাইপলাইনই বসানো হয়নি। ভোলা এলাকায় কোম্পানিটি সীমিত পরিসরে গ্যাস বিতরণ করে। তাও সেই গ্যাসের যোগান পায় তারা ভোলার একটি খনি থেকে উত্তোলিত গ্যাস থেকে।
শুনানিতে চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার পর প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তাদের চার্জ পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি। কমিশনের কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন ঠিক থাকলে তাদের বিতরণ চার্জ এখনও বাড়ছে।
আবাসিকে এক চুলার বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা, দুই চুলার ক্ষেত্রে ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি।
অন্যদিকে যারা গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটর ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ৬৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে তারা। এছাড়া বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬৬ পয়সা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২ টাকা ৭১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা ৭০ টাকা, শিল্পে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ১৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফী বলেন, ‘বিদ্যমান পাইপলাইনে ১০০০ এমএমসিএফডি গ্যাস (এলএনজি) আনা যাবে না। আর আসলেও তা সুন্দরবন পাবে না। ফলে এলএনজির আসার অজুহাতে তাদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও যুক্তি নেই।’ তিনি বলেন, ‘এসব কোম্পানির বোর্ডের অধিকাংশ লোক নন-টেকনিক্যাল। ফলে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা সঠিক হয় না। সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে এই কোম্পানির গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের কোনও দরকারই ছিল না।’
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি তাদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে আবেদন করেছে তাতে তারা বলেছে, দেশের বর্ধিত জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করছে এবং পেট্রোবাংলা কর্তৃক আইওসি গ্যাসের ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের ঘাটতি পূরণ, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রকৃত রাজস্ব ব্যয়ের ভিত্তিতে প্রাক্কলিত মার্জিন অনুযায়ী গ্রাহক শ্রেণিভিত্তিক প্রতি ঘনমিটারে প্রস্তাবিত মূল্য পুনর্বিবেচনা করে গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এদিকে বিতরণ মার্জিন শূন্য দশমিক ২৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ২৫৪০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে কোম্পানিটির দাবি। এই মার্জিন বাড়ানোর বিষয়ে তাদের বক্তব্য, এই কোম্পানির গ্যাস বিক্রয়ের পরিমাণ কম হওয়া, প্রশাসনিক ও পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া, সরকার ও দাতাসংস্থার কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা, উৎসে কর কাটার সঙ্গে প্রকৃত কর আদায়ের সামঞ্জস্যতা এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে এই বিতরণ মার্জিন বাড়ানো প্রয়োজন।
এর বিপরীতে মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, গত ১৬ অক্টোবর জারি করা বিইআরসির আদেশের মাধ্যমে কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ প্রতি ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা গত ১৮ অক্টোবর ২০১৮ থেকে কার্যকর হয়। এ অবস্থায় ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ হওয়ার পর প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে সুন্দরবন গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ পুনর্নির্ধারণ করা যথাযথা হবে বলে টেকনিক্যাল কমিটি মনে করছে।
Be the first to comment