গ্যাসের দাম বাড়ালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্যাসের দাম বাড়ানোর যৌক্তিক পূর্বাভাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, কিছুদিন পরপর জ্বালানির দাম বৃদ্ধি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। এতে করে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবিত মূল্য বাড়ানোর আবেদনের শুনানিতে ব্যবসায়ীরা একথা বলেন।

এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, মাহমদুউল হক ভুইয়া, রহমান মুশেদ, আব্দুল আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে শিল্প বনিক সংস্থা এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘যদি আমরা এমডিজির মতো সাফল্য অর্জন করতে চাই শিল্পে কর্মসংস্থান ছাড়া তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য ৭০ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রয়োজন। সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্ত সরকারের স্বল্প মেয়াদি শিল্প উন্নয়ন নীতি অগোছালো। কিন্তু মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন নীতি বেশ ভালো।’

তিনি বলেন, ‘শুধু দাম বাড়ানোর সময় আমাদের ডাকা হবে আর বিশ্ববাজারে দাম কমলে কমানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় না, এটি ঠিক হয়। ২০১৯ সালে বিশ্বে গড় গ্যাসের দাম ছিল ৬. ৯ ডলার। গত কয়েকবছরে মজুরি ও অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে আমাদের ২৯ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে উদ্যোক্তারা দেওলিয়া হয়ে যাবে। এছাড়া নতুন শিল্প উদ্যোক্তা তৈরি হবে না। এতে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।’

বিজিএমইএ এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সারাবিশ্বে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে জ্বালানির দাম কমেনি। আবেদন করার পর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সবেমাত্র গ্যাস সংযোগ পেতে শুরু করেছে। এখন এই দাম বৃদ্ধি কার স্বার্থে করা হচ্ছে?

তিতাসের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ৩৫ ভাগ লভ্যাংশ দিতে চাচ্ছেন কিন্তু আমরা তো দুই-তিন ভাগও ব্যবসা করতে পারছি না। তিনি গণশুনানিকে হাস্যকর আখ্যা দেন।’

বিটিএমএ’র সভাপতি মোহম্মদ আলী খোকন বলেন, গার্মেন্টস শিল্প যে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে তার পেছনে আমাদের ১৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। আপনারা বারবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছেন কিন্তু আমরা যে ইভিসি ( ইলেকট্রিক ভলিউম কারেকটর) মিটার চাচ্ছি তা দুই থেকে তিন বছরেও দিতে পারেননি। ফলে গ্যাসের নিম্নচাপ, অপর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসের প্রকৃত ব্যবহারের চেয়ে বিল বেশি দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাবি বিইআরসির কাছে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না আমাদের।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, আগামী এপ্রিলে এলএনজি আসতে পারবে না। এই বিষয়টি সরকার যেমন জানেন, বিইআরসিও তা বোঝে। কিন্তু তার পরেরও যে গ্যাস আসেইনি সে গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে তা অযৌক্তক ও অন্যায়।

তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। সরকার যতদিন অর্থ না দেয় ততদিন সে তহবিল থেকে ঋণ দিয়ে এলএনজির ব্যয় নির্বাহের আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবটি বাতিলের দাবি জানান।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.