গ্যাসের দাম নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই: বিইআরসি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভোক্তাকে গ্যাসের বাড়তি দাম নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। তিনি বলেন, আবেদনে যাই থাকুক দাম বাড়বে যৌক্তিক হারে। বিইআরসি নিরপেক্ষভাবে আইনের মধ্যে থেকে দাম বাড়াবে। টানা চার দিনের শুনানির সমাপনী বক্তব্যে বিইআরসি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) টিসিবি অডিটরিয়ামে কর্ণফুলী এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এ সময় কমিশনের সদস্য রহমান মুর্শেদ, সদস্য মাহমুদউল হক ভুইয়া, সদস্য মিজানুর রহমান, সদস্য আব্দুল আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শেষে মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিতরণ কোম্পানি যা চায় আমরা সেই হারেই দাম বাড়াই না। আমরা তাদের চাওয়ার তুলনায় অনেক কম দাম বাড়াই বলে বিতরণ কোম্পানি অসন্তুষ্ট হয়, আবার দাম বাড়াতে গ্রাহক বিষয়টি ভাল চোখে দেখে না। গ্রাহক আতঙ্কিত হন ভবিষ্যতে এমন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) না আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি প্রচলিত কথা রয়েছে এলএমজি চাইলে অন্তত পিস্তল মেলে, এজন্যই এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু এ ধরনের প্রস্তাব প্রচারিত হলে মানুষ আতঙ্কিত হয়। যা করা উচিত নয়।

তিনি কমিশনের কাছে করা ২০০৯ সাল এবং এর পরবর্তী আবেদন এবং মূল্যবৃদ্ধির শতকরা হার তুলে ধরে বলেন, ২০০৯ সালে বিতরণ কোম্পানিগুলোর ৬৫ দশমিক ৯২ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দাম বেড়েছিল ১১ শতাংশ। এখানে পর্যায়ক্রমে ২০১৫ সালে ৪০ দশমিক ৭৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৬ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৯৫ ভাগের বিপরীতে ১১ ভাগ দাম বাড়ে। আবার ২০১৮ সালে ৭৫ ভাগ দাম বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও দাম বাড়েনি। এবার বিতরণ কোম্পানিগুলো সংশোধিত প্রস্তাবে ১০২ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। তবে এতটা দাম বাড়বে না এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি। মনোয়ার ইসলাম বলেন, আইনের মধ্যে থেকে যৌক্তিক এবং নিরপেক্ষ দাম নির্ধারণ করবে কমিশন। তিনি বলেন, গ্রাহকের অর্থে গ্যাস এবং বিদ্যুত উন্নয়ন তহবিল করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রাহকের অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল। এসব তহবিলের সঠিক ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে মনোয়ার ইসলাম বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা, পিডিবিকে বলেছি এই তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এতে করে দেশের জ্বালানি এবং বিদ্যুতে স্বনির্ভর হবে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) হারুন উর রশীদ বলেন, ৫০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি করায় ৯ মাসে ৯ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। তিনি বলেন, মুনাফা করতে চাই না, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে চাই, আপনারাও চান। সেই কারণে আমদানি করতে হচ্ছে। আর আমদানি করতে হলে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। দেশীয় তেল-গ্যাস আহরণে সেভাবে কাজ না হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, দক্ষ লোকবলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সাগরে তেল-গ্যাস আহরণে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। আমরা চাচ্ছি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে। কিন্তু আমাদের মডেল পিএসসির দাম আকর্ষণীয় নয়। সেই কারণে সংশোধনীতে দাম আকর্ষণীয় করা হচ্ছে।

দুর্নীতির কারণে জ্বালানির দাম বাড়ে-ভোক্তাদের এই অভিযোগের বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম-সচিব জহির রায়হান বলেন, একদিনে বিপ্লব করতে পারবো না। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে পারলে ভালো। দুর্নীতি অনেকের মজ্জাগত দোষে পরিণত হয়েছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর ভূইয়া বলেন, ৩২ টাকা থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪৮ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রভাব কী হতে পারে কেউ ভাবছেন না। এই ঢাকায় এক সময় কালো ধোঁয়ায় থাকা যেত না। সেই কারণে সিএনজিতে যাওয়া হয়। এখন বলা হচ্ছে, তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। ভবিষ্যতে ঢাকার পরিণতির কথা ভাবতে হবে আমাদের। দাম বেড়ে গেলে গাড়ি ভাড়া বেড়ে যাবে। এতে অরাজকতা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, সিএনজির দাম বাড়ানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.