জ্বালানি খাতের কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা!

নিউজ ডেস্ক:
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিতে বিনিয়োগের অর্থ তুলে নিচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। মূলত এসব কোম্পানির শেয়ার দাম কমে যাওয়ায় তারা ছেড়ে দিচ্ছেন। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসই’র তথ্য মতে, দেশের পুঁজিবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট ১৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে ৬টি কোম্পানিতে এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কোনো বিনিয়োগ নেই। নতুন করে তারা এ খাতে বিনিয়োগও করছে না। উল্টো ৮ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন অনেকে। তবে ৫টি কোম্পানিতে বিদেশিদের আগের মতোই শেয়ার আছে।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। কোম্পানিগুলোর আয়ও বেড়েছে প্রতিবছর। তারপরও বিদেশিরা এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন না, বরং শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ডিএসইর তথ্য মতে, ২০১১ সালে তালিকাভুক্ত বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ারে বিদেশিদের কোনো বিনিয়োগ নেই। ঠিক একই রকম শেয়ারে বিনিয়োগ নেই ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস লিমিটেড, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, লিন্ডে বাংলাদেশ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং শাহজিবাজার পাওয়ার লিমিটেডে।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তালিকাভুক্ত সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেডের ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। আর গত বছরের জুলাইয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) শেয়ার ছিল দশমিক ৬২ শতাংশ, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে দশমিক ২৬ শতাংশে। খুলনা পাওয়ার কোম্পানির (কেপিসিএল) শেয়ার দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে কমে ৬৮ শতাংশে, এমজে বাংলাদেশের শেয়ার দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমে ৩৬ শতাংশে, পদ্মা অয়েলের শেয়ার ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশে, পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমে দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, গত বছরের জুন মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তিতাস গ্যাসের শেয়ার ছিল ২ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা গত ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশে। আর ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির শেয়ার গত জানুয়ারিতে দশমিক ১১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৮ শতাংশে।

অপরদিকে, চলতি বছরে ৫ কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা করেননি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোস লিমিটেড, ডোরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেম লিমিটেড, জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এবং সামিট পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ার।

এ বিষয়ে ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘তিতাস গ্যাস ও ডেসকোসহ এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিভিন্ন সময় পলিসি পরিবর্তন করে। ফলে ভালো মুনাফা হলেও শেয়ারহোল্ডাররা প্রত্যাশা অনুযায়ী লভ্যাংশ পান না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। ফলে কোম্পানিগুলোতে যে পরিমাণ মুনাফা হওয়ার কথা সেই পরিমাণ হচ্ছে না। আর এ কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে নতুন বছরের শুরুতে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লেও এখন আবার পাল্লা দিয়ে কমছে।’

ডিএসইর তথ্য মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে গত ৪ মার্চ পর্যন্ত ডেসকো কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে ৫০ দশমিক ৬০ টাকায় দাঁড়ায়। কিন্তু তারপর গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার খবরে শেয়ারের দাম কমেতে থাকে। সর্বশেষ ১৪ মার্চ এ কোম্পানির শেয়ার ৪৫ দশমিক ৫ টাকায় লেনদেন হয়। একইভাবে কমেছে তিতাস গ্যাসসহ প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সৌজন্য: barta24

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.