বাখরাবাদের বন্ধ থাকা কূপে গ্যাসের সন্ধান

কূপের মুখে আগুন প্রজ্জ্বলন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের ১নং কূপের দুটি নতুন স্তরে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সফল ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে বুধবার থেকে এই কূপ থেকে পুনরায় গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়েছে।

প্রাথমিক অবস্থায় এই কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কূপটির ওয়ার্কওভার কাজের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মীর মো. আশরাফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ওয়েল হেডে অর্থাৎ কূপের মাথায় প্রায় ১৯৫০ পিএসআই (পাউন্ড প্রতি বর্গ ইঞ্চি) গ্যাস প্রবাহের চাপ রয়েছে। এছাড়া কূপটি ওয়ার্কওভারের সময় ২০০০ মিটার থেকে ২০০৬ মিটার গভীরতায় আরেকটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন পরিচালনা করা হলে সেখানেও গ্যাস পাওয়া যাবে- যা থেকে দৈনিক কমপক্ষে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় বাস্তবায়িত ‘তিতাস, হবিগঞ্জ, নরসিংদী ও বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে ৭টি কূপের ওয়ার্কওভার’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই কূপের ওয়ার্কওভার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১৫ মে পর্যন্ত ওয়ার্কওভার কার্যক্রম চলে।

জানা গেছে, বাখরাবাদ ১নং কূপটি পাকিস্তান আমলে (১৯৬৮ সালে) শেল অয়েল লিমেটেড নামে একটি কোম্পানি ২৮৩৮ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন করে। খননকালে ১৭৮৯ মিটার থেকে ২৫০০ মিটার গভীরতার মধ্যে মুখ্য ও গৌণ ক্যাটাগরির মোট ১০টি ( অ, ই, ঈ, উ, ঋ, এ, ঔ, ক এবং খ) আলাদা আলাদা গ্যাস স্তরের অস্তিত্ব মেলে। এসব গ্যাস স্তরের কয়েকটি থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদনও (ডিএসটি) পরিচালিত হয়।

এক পর্যায়ে কূপটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। ১৯৮১ সালে কূপটিতে প্রথম ওয়ার্কওভার সম্পন্ন করে ওই গ্যাস স্তর থেকে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত পানি উৎপাদন এবং চাপ হ্রাসের কারণে ২০১৫ সালে কূপটিতে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের চরম গ্যাস সংকট নিরসনে উৎপাদন বন্ধ থাকা কূপগুলো পুনরায় উৎপাদনে আনার সম্ভাব্যতার বিষয়ে পেট্রোবাংলা থেকে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। কমিটি বাখরাবাদ ১নং কূপটি ১৯৫০ মিটার থেকে ১৯৭০ মিটার গভীরতায় বিদ্যমান স্তরে ওয়ার্কওভারের সুপারিশ করে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, কুপটিতে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ আছে প্রায় ১১১ বিসিএফ। এই গ্যাসের ৮০ শতাংশ রিকভারি বিবেচনায় কূপ থেকে ৮৮ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হয়। তারপর শুরু হয় ওয়ার্কওভারের কাজ। দীর্ঘ ৪ মাস নানা কারিগরি জটিলতা শেষে ৫০ বছরের বেশি পুরাতন কূপটির ওয়ার্কওভারের কাজ শেষ হয়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.