নিজস্ব প্রতিবেদক : আবাসিক, সিএনজি এবং বাণিজ্যিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত আদেশটি বৃহস্পতিবার সকল গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানির কাছে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের আদেশে নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত আদেশে গত মঙ্গলবার ২১ মে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে স্ব স্ব কোম্পানির বোর্ড গ্যাসের প্রাপ্যতা অনুযায়ী নতুন গ্যাসের সংযোগ প্রদান করবে একই সঙ্গে তারা গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে লোডও বৃদ্ধি করবে।
এত দিন শিল্প কারখানায় নতুন গ্যাসের সংযোগের জন্য পৃথকভাবে কোম্পানিতে আবেদন করতে হতো। ওই আবেদনগুলো কোম্পানি প্রক্রিয়া করে উপদেষ্টা কমিটিতে প্রেরণ করতো। উপদেষ্টা কমিটি আবেদনগুলোর নিষ্পত্তি করতো। এতে করে গ্যাস পেতে শিল্প মালিকদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হতো। একই সঙ্গে এই কমিটির সুপারিশ পেতে নানা রকম বিড়ম্বনার কথাও শোনা যায়। গত নির্বাচনের আগে এক সঙ্গে দুই হাজার শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয় এই কমিটি। তখনই এই কমিটির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক তিতাসের দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানেও উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে । দুদক বলছে নানাভাবে গ্যাসের সংযোগকে কঠিন করে তোলা হয়েছে যাতে উৎকোচের হার বৃদ্ধি পায়।
সরকারের ওই আদেশে বলা হয়েছে দেশে আবাসিক পর্যায়ে এলপিজির সহজলভ্য এবং ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আবাসিক এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের সংযোগ বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কারাগার এই আদেশের বাইরে থাকবে। সরকার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে গ্যাস সঙ্কটের কথা বলে আবাসিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে আবার আবাসিক সংযোগ চালু করে। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর আবার অলিখিতভাবে জ্বালানি বিভাগ থেকে বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিকে নতুন আবেদন নিতে নিষেধ করে দেয়া হয়। কিন্তু কোন কোন বিতরণ কোম্পানি সরকারের লিখিত আদেশ না থাকায় আবেদনপত্র গ্রহণ করে একই সঙ্গে ডিমান্ড নোটও ইস্যু করে। কিন্তু আবাসিকে তারা আর নতুন সংযোগ দিতে পারেনি। দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১০ থেকে ১২ ভাগ আবাসিক গ্রাহকরা ব্যবহার করেন। তবে আবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি বিল আদায় করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। কারণ একজন আবাসিক গ্রাহককে মাসে ৮৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার ধরে দাম নেয়া হয়। বাস্তবে একজন গ্রাহক এর অর্ধেক গ্যাসও ব্যবহার করে না। তবে এত দিন আবাসিক গ্রাহকরা আর গ্যাস পাবেন না লিখিত এমন কোন আদেশ ছিল না। এই প্রথম যা জারি করা হলো।
যদিও সম্প্রতি বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আবাসিক গ্রাহকেরা আর নতুন কোন গ্যাস পাবেন না। তিনি কারণ হিসেবে আবাসিকে গ্যাস অপচয় এবং বিকল্প এলপিজি রয়েছে বলে জানান।
তবে সমালোচনা রয়েছে সরকার এলপিজির দাম নিয়ন্ত্রণ না করে। বাজার নিয়ন্ত্রণের সব কিছু বেসরকারী কোম্পানিগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়ে তাদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতে আবাসিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনেক আবাসিক গ্রাহক গ্যাস চুরি করে ব্যবহার করছেন। যার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহক।
একই সঙ্গে এবার বাণিজ্যিক গ্রাহকদেরও আর পাইপলাইনে গ্যাস দেয়া হবে না। তাদেরও এলপিজি ব্যবহারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আদেশে জ্বালানি বিভাগ বলছে, দেশে সিএনজির বিকল্প হিসেবে অটোগ্যাস (এলপিজি) এসেছে। এখন চাইলে এলপিজি দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব। ফলে নতুন করে আর কোন সিএনজি স্টেশন অনুমোদন পাবে না। আদেশে ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্প মালিকদের নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র) গ্যাস না দেয়ার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয় ক্যাপটিভের দক্ষতা কম। একই সঙ্গে গ্রিডে এখন পর্যাপ্ত বিদ্যুত থাকায় নতুন করে আর ক্যাপটিভে সংযোগ দেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত এখন সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র সারাবছরই বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
একই সঙ্গে বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস সংযোগের জন্য পাইপলাইন স্থাপনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সৌজন্য: জনকণ্ঠ
Be the first to comment