নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও আধুনিকায়ণ না করা এবং কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবের কারণেই সিলেটের, কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
এদিকে দায়িত্বহীনতাই এই দূর্ঘটনার জন্য অনেকটাই দায়ী বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
আজ সোমবার (১১ জানুয়ারি) অনলাইনে ‘গত ১৭ নভেম্বর সিলেটের কুমাগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করে।
গতবছর ১৭ নভেম্বর বেলা ১১টা ৫ মিনিটে কুমাগাঁও এর উপকেন্দ্রে এই আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। এতে প্রায় ২৪ ঘন্টা সিলেট শহর ছিল বিদ্যুৎবিহীন। হঠাৎ করে এ রকম ঘটনায় চরম ভোগান্তির শিকার হন গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সামনে এই আগুনের ঘটনা গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ্ মো. দস্তগীর, এনডিসি, প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এ সময় অনলাইনে অন্যান্যের মাঝে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পিডিবর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ও পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন।
উপকেন্দ্রে সংঘটিত প্রতিবেদনে এককভাবে কাউকে দায়ী না করলেও ১৯৬৭ সালে স্থাপিত উপকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও আধুনিকায়ণ না করা এবং কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীর সামনে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রিড বা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাইবার সিকিউরিটি ও ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রয়োজন। লোকবল স্বল্পতার দোহাই দেয়া হয় কিন্তু নিজেদের আপগ্রেড করার বিষয়ে কাউকেই ততটা আন্তরিক মনে হয় না। পর্যাবৃত্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিল তাদের দায়িত্বহীনতাই এই দূর্ঘটনার জন্য অনেকটাই দায়ী। সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য জনগণের যে অবর্ণনীয় কষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার জন্যও এরা দায় এড়াতে পারে না।
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো, পিজিসিবির নিয়ন্ত্রাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ইকুইপমেন্টস এর কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম (ডিসি সোর্স ব্যাটারি, চার্জার ও ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল) এবং বিউবোর নিয়ন্ত্রাধীন ৩৩ কেভি বাস ও ইকুইপমেন্টস এর কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সম্পূর্ণ আলাদা করা, ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) স্থাপন করা, জরুরি ভিত্তিতে গ্রাউন্ডিং সিস্টেম বৃদ্ধিপূর্বক যথাযথমানে উন্নয়ন/সম্প্রসারণ করা, ভূগর্ভস্থ কন্ট্রোল ক্যাবলিং সিস্টেম জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা, ফল্ট লেভেল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভিতে প্যারালালে সংযুক্ত পাওয়ার ট্রান্সফরমারগুলি জরুরীভিত্তিতে পৃথক করা,পাওয়ার ট্রান্সফরমার, কারেন্ট ট্রান্সফরমার, পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইকুপমেন্টসমূহ উচ্চ গুনগতমান সম্পন্ন হওয়া, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দক্ষ কারিগরি জনবল দ্বারা দেশের সকল গ্রিড উপকেন্দ্র ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা করা, উপকেন্দ্রের সংরক্ষণ কাজগুলি যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তদারকী আরো জোরদার করা, উপকেন্দ্রের পরিচালন ও সংরক্ষণ কাজগুলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পিজিসিবি ও বিউবো কর্তৃক পৃথকভাবে জনবল পদায়ন করা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টির ব্যবস্থা করা, গ্রিড উপকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলো নিয়মিত পরীক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং এসকল যন্ত্রপাতির জন্য ইতিহাস বই সংরক্ষণ করা, জরুরী ভিত্তিতে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের বিকল্প সোর্স তৈরি করা।
এ সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদনে প্রদত্ত সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোভিট পরিস্থিতি সত্বেও বিদ্যুতের কাজের গতি কোন অবস্থায় মন্থর হওয়া যাবে না।
Be the first to comment