নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী ২০ বছরে ৩০ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতোমধ্যে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) খসড়া একটি রোডম্যাপ বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানোর পর তা অনুমোদনও পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে সোলার থেকে ২৯ হাজার ৪৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’ ম্যাগাজিন আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত সৌর বিদ্যুতের রোডম্যাপ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেমিনার সঞ্চালনা করেন ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হলে রিসোর্স ম্যাপিংটা বেশি জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে সোলার নিয়ে রোডম্যাপিং করা হয়েছে। এটি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠিয়েছি। তারা সংশোধন ও পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করবেন। প্রধানতম সোর্স হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ, তাই এখন পর্যন্ত এটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভার্নারেবল ফোরামে বাংলাদেশের বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চর এলাকায় প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের মাধ্যমে সোলার বিদ্যুৎ স্থাপন করতে দেওয়া যেতে পারে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে সোলার নেওয়ার জন্য। প্রয়োজন হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাওয়া। খুব বেশি সাফল্য নেই। আমরা আরও অনেকদূর যেতে পারতাম। প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তির প্রয়োজন রয়েছে। তবে একক জ্বালানি নির্ভরতার দিকে যাওয়া যাবে না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘এই ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কীভাবে কোথায় ব্যবহৃত হবে, নাকি এগুলো স্টোরেজ করা হবে, তার খরচ কতো হবে, এসব বিষয় বিস্তারিত থাকা দরকার। জমির সমস্যা সরকার ইচ্ছা করলে একটু ছাড় দিতে পারে। এই ছাড়টাই হতে পারে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য বড় বিষয়।’
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যায় আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। সে সময় এই বিদ্যুৎ কাজে লাগবে কিনা তা বিবেচনা করা দরকার। আমাদের ৬০ শতাংশ চাহিদা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। এর খরচ প্রতি ইউনিট ৯ টাকা। ভবিষ্যতে এলএনজিতে গেলে খরচ হবে সাড়ে ৮ টাকা। যদি সোলার এর নিচে আসতে পারে, তাহলে এই চাহিদা সোলার দিয়ে পূরণের চেষ্টা করা যেতে পারে। এটা হলে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ সোলার থেকে করা যাবে। শিল্পায়ন হলে দিনের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। তখন সোলার থেকে বাড়তি চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে দিনের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে ৩০-৩৫ শতাংশ সোলার থেকে আসতে পারে।’
ইউনাটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনভাসিটির সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেড’র চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অন্যান্য টেকনোলজিকে তা ছাড়িয়ে যাবে। সোলারের খরচ কমে যাচ্ছে যে কোনও টেকনোলজির চেয়ে। আগে যেখানে কিলোওয়াট প্রতি প্যানেলের খরচ ছিল তিন থেকে চার ডলার। এখন ২৬-৩০ সেন্টে নেমে এসেছে।’
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে ৫৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় প্রধান নদীগুলোর শাসন করা হলে বিপুল পরিমাণ ভূমি পুনরুদ্ধার করা যাবে। যেগুলো ১৩টি হাব করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই হাবগুলোতে ১২ হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। দ্বিতীয় সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে ছাদে স্থাপিত সৌর বিদ্যুৎ থেকে। এই খাত থেকেও ১২ হাজার মেগাওয়াটের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।
Be the first to comment