নিজস্ব প্রতিবেদক:
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এলপিজির তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) খুচরা মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। এলপিজির মতো পণ্যে দাম নির্ধারণের বিসয়ে বিইআরসির দক্ষতা নেই। তারা বাস্তবতা না মেনে নিজেদের মতো দাম ঠিক করছে। এভাবে চললে এলপিজি ব্যবসায় ধ্বস নামবে।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছে এলপিজি অপারেটস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব)। এ অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় বিইআরসি কর্তৃপক্ষ বলেছে, কমিশনের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি পছন্দ না হলে অপারেটররা আদালতে যেতে পারে।
গত জানুয়ারিতে শুনানি করে ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরপর প্রতি মাসেই আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিয়ে এলপিজির দাম সমন্বয় করে আসছে বিইআরসি। কিন্তু এলপিজি ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই ঘোষিত মূল্যের বিরোধিতা করে আসছিলেন। এমনকি বিইআরসি নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করেনি তারা। ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে ফের শুনানির জন্য আগামী ৭ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছে বিইআরসি।
ঢাকার হোটেল কন্টিনেন্টালে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী বলে শুনানিতে তাদের উত্থাপিত অনেক কস্ট ফ্যাক্টর বিবেচনায় নেয়নি কমিশন। কমিশন তাদের মতো দাম নির্ধারণ করেছে। যদিও এই দাম নির্ধারণের দক্ষতা বিইআরসির নেই। প্রতিষ্ঠানটিকে তথ্য উপাত্ত, বিশেষজ্ঞসহ সার্বিক সেবা দিয়েছে লোয়াব।
সংবাদ সম্মেরনে আজম জে চৌধুরী বলেন, বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করলে কোনো কোম্পানিই বাজারে টিকবে না। বিইআরসির নির্ধারিত দামে একটি ১২ কেজির এলপি সিলিন্ডার বিক্রি করলে ১৪৮ টাকা লোকসান গুণতে হবে কোম্পানিগুলোকে। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এলপিজি ব্যবসায়ীদের কস্টফ্যাক্টরগুলোকে বিবচেনায় নিতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আজম জে চৌধুরী।
প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে গ্রাহককে সুলভ মূল্যে এলপিজি দেওয়ার সুপারিশ করেছে লোয়াব। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রত্যেক মাসের শুরুতে এলপি গ্যাসের আন্তর্জাতিক মূল্য (সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস বা সিপি) ঘোষণা করা হয়। তাই এলপি গ্যাসের সিপি ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যহার ঘোষণা করা প্রয়োজন। বিইআরসি বর্তমানে একমাস পর মূল্যহার ঘোষণা করছে, যা বাস্তব সম্মত নয়।
তিনি আরো জানান, অটোগ্যাসের দাম প্রতিমাসে পরিবর্তন করা হলে গ্রাহক পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেবে। কারণ বাজারে যানবাহনের অন্য যে সব জ্বালানি আছে যেমন, সিএনজির দাম প্রতিমাসে পরিবর্তন করা হয় না। তাই অটোগ্যাসের দাম বছরে একবার নির্ধারণ করতে বিইআরসিকে অনুরোধ করে লোয়াব।
বাজারে একেক কোম্পানির এলপি গ্যাসের দাম একেক রকম কেন জানতে চাইলে আজম জে চৌধুরী বলেন, দেশে এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি থাকায় দামের এই পার্থক্য হচ্ছে। সরকার এখন একটি নীতিমালা করছে, এর মাধ্যমে কোম্পানি কতটুকু এলপি গ্যাস আনতে ও বিক্রি করতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেবে। এছাড়া কোম্পানির সংখ্যাও এখন অনেক বেশি। নীতিমালায় কী পরিমাণ কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া দরকার তারও একটা নির্দেশনা থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো পেট্রোলিয়ামের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মুনতাসির আলম, পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারির সিইও নাফিস কামাল, ওমেরা এলপিজির সিইও শামসুল হক আহমেদ, বসুন্ধরা এলপিজির হেড অব সেলস জাকারিয়া জালাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জুন মাসের জন্য বেসরকারি কোম্পানির ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। মে মাসে সমপরিমাণ এলপিজির সিলিন্ডারের দাম ছিলো ৯০৬ টাকা। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস নামে পরিচিত)র নতুন দাম প্রতি লিটার ৪১ টাকা ৭৪ পয়সা হয়েছে। যা ছিল মে মাসে ছিলো ৪৪ টাকা ৭০ পয়সা।
Be the first to comment