দক্ষতা বাড়াতে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের সুপার হাইওয়েতে রয়েছে। এটাকে সাসটেনবল করার জন্য নিজস্ব সম্পদ, জনশক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দেশে জ্বালানিসহ সকল খাতে দক্ষ জনবলের সংকট চরমে। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই ঘাটতি পূরণে বড় অবদান রাখতে পারে।

তবে নীতিমালার আওতায় প্রবাসীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আবার বেসরকারি খাতকে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদেরও কাজে লাগাতে খোলা মনে নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবে দেশে কাজের ক্ষেত্রে প্রবাসীদেরও মনোভাবও বদলাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীন ও ভারতের কারিগরি উৎকর্ষতায় তাদের প্রবাসীজন বলের ভূমিকা অপরিসীম।

“এনার্জি সেক্টওইউম্যানরির্সোস ডেভলপমেন্ট: ক্যানএনআরবিএক্সপার্ট সাপোর্ট?” শীর্ষক ইপিটক নেতারা উপরের মতামত তুলে ধরেন।
আজ শনিবার (জুলাই ৩১) এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত এই ওয়েবনার সঞ্চালনা করেন পাক্ষিকটির সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডীন প্রফেসর এম তামিম, গেষ্ট অব অনারহিসাবে যুক্ত ছিলেন এফবিসিসিআই এর পরিচালক ও ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যানইঞ্জি গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। আলোচকহিসাবে যুক্ত ছিলেন ইউনিভারসিটি অব কুইনল্যান্ডেপ্রফেসর ড. তপনসাহা, পাওয়ার সেলের মহাব্যবস্থাপকইঞ্জি মোহাম্মদ হোসেন, আরএমআইটির প্রফেসর ড. ফিরোজ আলম ও আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞইঞ্জি খন্দকার আবদুলসালেক।
প্রফেসর ম. তামিম বলেন, কেবল জ্বালানি খাতে নয়, সকলখাতেই দক্ষ জনবল সংকটের মধ্যে আছে। তিনি দক্ষ জনবল চাহিদা নিরুপণ ও গড়ে তোলার জন্য একটি বিভাগ বা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজারের চাহিদার নিরিখেশিক্ষক্রমে পরিবর্তন আনছে। বুয়েটও তার শিক্ষাক্রমে আগামী ২ বছরের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি বলেন, শুরুতে শিল্পের সাথে বিশেষ করে পেট্রোবাংলার সাথে গবেষণারকাজে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ এমনকি বিনে পয়সা কাজ করার আগ্রহ দেখিয়ে ও সাড়া না পাওয়ায় বিদেশী তথ্যউপাত্তের উপর ভিত্তি করে ছাত্রদের গবেষনা করেয়িছেন। তিনি বলেন, কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইলেই হবেনা অংশীদারিত্বের জন্য শিল্পকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে তিনি মনে করেন, দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বস্ত্র ও গামেন্টখাতের জন্য মধ্য পর্যায়ে ব্যবস্থাপক তৈরীতে ব্যর্থ হয়েছেন, কেননাএটারজন্য দক্ষ ফ্যাকাল্টির অভাব আছে, আবার ছাত্রও স্বাধীনভাবে না নিয়ে এগিয়ে আসছে না।
ম. তামিম মনে করেন, এনআরবি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হলে কোথায় কী ধরনের কাজের সুযোগ আছে তার ম্যাপিং করে অংশ নেওয়ার জন্য নীতি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যদিকে দেশের জন্য জরুরি কাজগুলো করার মতো প্রবাসী জনবল কোথায় কী আছে তারও নেটওয়ার্ক তৈরীকরতেহবে। এককভাবে সরকার নয়, বেসরকারী খাতকে এতে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু দু:খজনক হচ্ছে অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এখনোকর্পোরেট কালচার চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রবাসীরা অনেকে আগ্রহী হয়েও ফিকে হয়ে গেছেন। আর সরকারের ক্ষেত্রে যেখানে নিজস্ব প্রবাসী জন বল আছে তাতে অর্থায়নের শর্ত না থাকলে তাদেরও ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।
গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশেষ করে জ্বালানি অবকাঠামোর উন্নয়ন অতিতের সকল রেকেড ভেঙ্গেছে। কিন্তু এটাকে সাসটেনবল করতে চাইলে নিজস্ব সম্পদ, প্রতিষ্ঠান ও জনবলকে কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞরাও আমাদের এক বড়সম্পদ। আমাদের শিক্ষা এখনো তত্বনির্ভর, শিল্পের সাথে তার যোগাযোগ কম। ফলে দক্ষ জনবল ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রবাসীবিশেষজ্ঞদেরও উন্নয়নকাজে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। একই সাথে শিক্ষাকে কার্যমুখী করতে শিল্পকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে এগিয়ে আসতে হবে।
গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর দেশে ভকেশনালশিক্ষারউপর জোর দিয়ে বলেন, যে সকল সরকারি ভোকেশনাল চলছে না তা পরিচালনার জন্য বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

তিনি এই ধরনের ২০টি বার্তার চেয়ে বেশিপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে দক্ষ জনবল তৈরীতে কাজ করতে চান। তিনি ৩০০ প্রবাসীবিশেষজ্ঞদেও নিয়েবাংলাদেশে সম্মেলন আয়োজনের কথা স্বরণ করে বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে প্রবাসীরা কাজ করছে।
অন্যদের উপর প্রবাসীবিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো। তিনি মনে করেন বিভিন্ন প্রকল্পে বাধ্যবাকতা না থাকলে বিদেশীর বদলে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদেও পরামর্শক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। তাতে যথাসময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।
প্রফেসর ড. তপন সাহা বলেন, আমরা অস্টেলিয়ায় ছাত্রদের নিয়ে শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে শিল্পের সাথে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। আর বাংলাদেশে এটা শুরু হলে প্রবাসীরা এখানে কাজ করার সুযোগ পাবে। কোথা থেকে কোন প্রবাসী বিশেষজ্ঞ কীভাবে বাংলাদেশে সহায়তা করতে হবে তার এতটি ডাটা বেইজ তৈরী করে তাদের পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হলে টেকসই উন্নয়ন আরো বেগবান হবে।
মোহম্মদ হোসেইন বলেন, বিশেষজ্ঞ প্রবাসীরা যাতে দেশে বিশেষ করে জ্বালানি খাতে ভূমিকা রাখতে পারে তার জন্য প্লাটফর্ম তৈরী করতে হবে। সকল খাতে প্রবাসীরা কীভাবে অবদান রাখতে পারে তার জন্য আইইবিতাদের বিদেশী চ্যাপ্টারের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করেছে। বাংলাদেশে পাওয়ার এন্ড এর্নাজিরি র্সাসকাউন্সিলে পরিচালনায় ৫০ শতাংশ বিদেশীবিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাদের কাজে লাগাতে হলে নীতি নির্ধারকদের ভাবনা পরিবর্তমান আনতে হবে, প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের মনোভাবও বদলাতে হবে। ইঞ্জি হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে অনেক প্রবাসীবিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সহায়তা করেছেন।প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সহায়তা পাওয়ার জন্য সরকারের নীতিতেতার যুক্ত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিল্পর সাথে যুক্ত করার জন্য উভয় পক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জ্বালানি খাতের আজকের অর্জনকে আরো স্মাট ও দক্ষ করার জন্য দেশীপ্রবাসী বিশেষজ্ঞ সেতুবন্ধন তৈরীর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে মাধ্যমে সমৃদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
প্রফেসর ড. ফিরোজ আলম মনে করেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রসর পর্যায়ে আছে। এটাকে টেকসই ও স্থায়ীকরার জন্য নিজস্ব বিশেষজ্ঞ তৈরীর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের সাথে ব্যক্তিক, প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তি সরকার এবং প্রতিষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান যোগযোগ স্থাপন করে নিজস্ব বিশেষজ্ঞ জনবল তৈরী নিশ্চিত করা সম্ভব। চীন ও ভারত কারিগরি বিষয়ে উৎকর্ষতা অর্জানে তাদের প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশকেও ঐ পথে যেতে হবে।
খন্দকার আবদুস সালেক বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী বংশভূত বিশেষজ্ঞ বিশ্বে কোথায় কীসম্পদ আছে তার একটি নেটওয়াকিং করে কীভাবে তাদের দক্ষতা কাজে লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রকল্পবাস্তবায়নে বিদেশীদেরবদলে প্রবাসীদের কাজে লাগাতে পারলে সাসটেনেবল উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.