এলপিজির মূল্য সমন্বয়ের শুনানি না সমঝোতা!

রশিদ মামুন:

আগামীকাল ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও এলপিজির মূল্য সমন্বয়ের গণশুনানি করতে যাচ্ছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (ইআরসি)। বছরের শুরুর দিকে একদফা শুনানি করে দর বেঁধে দেয়ার পর আবার শেষ প্রান্তিকে এসে কেন এই গণশুনানির প্রয়োজন পড়লো তা নিয়ে নানা মুখি সমালোচনা রয়েছে। নিন্দুকেরা তো বলছেন কমিশন আসলে এলপিজির দর ঘোষনার পরও তা মানতে বাধ্য করাতে পারছে না। ফলে এলিপিজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা বৈঠক হতে যাচ্ছে এই শুনানি।

ইআরসি সূত্র বলছে, বেধে দেয়া দরে এলপিজি মজুদকরণ ও বোতলজাত করণ চার্জ, পরিবেশক এবং খুচরা বিক্রেতা চার্জের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে এলপিজি ব্যবসায়ীরা। দেশের ১৮টি এলপিজি বিপনন কোম্পানি এসব বিষয়ে ইআরসি বেঁধে দেয়া চার্জ পরিবর্তণের আবেদন করেছে। কমিশন সেই আপত্তি গণশুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চায়।

কমিশনের একজন সদস্য জানান, প্রথম দফা এলপিজির দর নির্ধারণের সময় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী অনাগ্রহী ছিল। তারা মনে করেছিল কমিশন শেষ অবধি দাম নির্ধারণ করতে পারবে না। কিন্তু যখন কমিশন দাম নির্ধারণ করে ফেলেছে তখন তারা এসে বলল কিছু বিষয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। আমরা তাদের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে বলেছি। যা গণশুনানির মাধ্যমে নিস্পত্তি হবে।

প্রথমবার গণশুনানির পর কমিশন ১২ এপ্রিল সারাদেশে এক দরে এলপিজি বিক্রির দর ঠিক করে দেয়। এরপর সৌদি সিপি অনুযায়ি প্রতিমাসেই কমিশন দাম নির্ধারণ করে। তবে ঘোষিত দরে দেশের কোথাও কোনদিন এলপিজি বিক্রি হয়নি। উল্টো এলপিজির দর নির্ধারণ সঠিক হয়নি দাবি করে এলপিজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন লোয়াব গত ১৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলন করে বলে, ইআরসির জন্য দেশের এলপিজি বাণিজ্য ধ্বংস হতে চলেছে। সংবাদ সম্মেলনে লোয়াবের প্রস্তাবের সঙ্গে ইআরসি ৫-৬টি কস্ট কম্পোনেন্টের ক্ষেত্রে বড় ধরনের গরমিল থাকার কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইআরসির দক্ষতা এবং যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

এলপিজির মূল্য সমন্বয় নিয়ে শুনানিকে কেন্দ্র করে ইআরসির আগ্রহ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রগুলো বলছে, ১২ এপ্রিল প্রথম দফা মূল্য ঘোষনা করার পর ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ সঠিক হয়নি তা বিক্ষিপ্ত ভাবে ইআরসির নজরে আনে। ইআরসি বিষয়গুলো আমলে নিয়েই আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে বলে। দেশের ১৮টি এলপিজি অপারেটর ২৯ মে থেকে ৩ জুনের মধ্যে মাত্র পাঁচ দিনে ইআরসির কাছে প্রস্তাব জমা দেয়। ইআরসি সেই প্রস্তাবের উপর সরাসরি গণশুনানি করার জন্য ৭ এবং ৮ জুলাই দিন ঠিক করে। ওই সময় দেশে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকায় সরকার লকডাউন ঘোষনা করলে বিইআরসি শুনানি স্থগিতে বাধ্য হয়। করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে আসলে ১৭ এবং ১৮ আগস্ট ফের শুনানি করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ওই সময়ে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব এর করা রিট পিটিশন ৫৭৬৩/২০২১ আমলে নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি স্থগিতের আদেশ দেয়। কমিশন হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটির উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আপিল করে। চেম্বার জজ ২৬ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশটি ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। এই সময়ের মধ্যেই ইআরসি এই শুনানি করছে। শুনানিতে কমিশনের অতিআগ্রহ দেখে অনেকেই বলছেন আগের মূল্য নির্ধারণে বড় কোন ভুল ছিল কমিশনের। যে কারণে এবার সেটি শুধরে নিতে চায়। এজন্য শুনানির নামে এক ধরনের সমঝোতা করছে ইআরসি।

এলপিজি অপারেটরদের সংগঠনের লোয়াবের প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী ১৫ জুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৩০ হাজার কোটি টাকার এলপিজি শিল্প ধ্বংস হতে চলেছে। প্রতি বছরে আমরা ৫০ হাজার কিউবিক মিটার গ্যাস বিক্রি করছি। এর সুবিধা সারা বাংলাদেশে মানুষ প্রতিটা ক্ষেত্রেই গ্রহণ করছে। সেটা বন্ধ হতে চলেছে। একটি পক্ষ রয়েছে যাদের ভাবটা এমন,দেশপ্রেম শুধুমাত্র তাদের আছে আমাদের নেই! আমাদের দেশ প্রেম না থাকলে এই ইন্ডাস্ট্রি বর্তমান অবস্থায় আসতে পারতো না। এখন যদি আমরা সরবরাহ বন্ধ করতে যাই তাহলে সাধারণ ভোক্তা কষ্ট ভোগ করবে। কিন্তু এখন যদি উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য কিছু ঘটে তাহলে সব দায়দায়িত্ব বিইআরসি’র।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.