নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির চল শুরু করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। কেউ বলেন ইলেক্ট্রিক গাড়ি আবার কেউ সংক্ষেপে ডাকেন ইভি। যে যা নামেই ডাকুক না কেন বৈদ্যুতিক গাড়ি এখন দুনিয়া জুড়ে বিপ্লবের আরেক নাম। পেট্রোল বা ডিজেলের মতো ফসিল ফুয়েল নয়, এই গাড়ি চলে ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুতে। আর এতে কিলোমিটার প্রতি খরচ পড়ে মাত্র ৫০ পয়সা। সস্তায় চলাচলই জনপ্রিয় করছে বৈদ্যুতিক গাড়িকে।
পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী যান হিসেবে সারা বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সেখান থেকে খানিকটা পিছিয়ে থেকে এই উদ্যোগ নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ইভি আমদানি এবং বিক্রির পাশাপাশি জনপ্রিয়তা বাড়াতে নীতিমালা প্রনয়ণের কাজ শুরু করছে সরকার। আজ (১২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাচলের উপর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গাড়ি আমদানি এবং অন্যান্য বিষয়ে কাজ করবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। আর ইভির জন্য চার্জিং স্টেশন করে দেবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, এ ধরনের গাড়ির সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে চার্জিং স্টেশন। চাইলে বাসা বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইনে এগুলো চার্জ করা যেতে পারে। কিন্তু একবার রাস্তায় নামলে সেটিতো আর সম্ভব নয়। ফলে রাস্তায় থাকতে হবে চার্জিং স্টেশন।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, আজকের বৈঠকে তারা চার্জিং স্টেশন করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। গাড়ি আমদানি এবং বাজারজাত করণের উদ্যোগ নেবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে ২০২০ সালে অন্য সব মোটরগাড়ির বিক্রি যেখানে কমেছে, সেখানে ইভি গাড়ির বিক্রি ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। মোট গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৩২ লাখ। যদিও এর বেশিরভাগেই আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে। তবে এশিয়ার চীন এবং ভারত বৈদ্যুতিক গাড়ি রাস্তায় নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে জোরেসোরে।
বিশ্বে একচেটিয়া বাজার দখল করে রেখেছে ইলন মাস্কের কোম্পানি গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি টেসলা। টেসলা তাদের সব শেষ প্রযুক্তির গাড়িটি একবার চার্জে ৩০০ মাইল অবধি যাওয়া সম্ভব বলে দাবি করেছে। তবে এ ধরনের গাড়ি চার্জিং স্টেশেন ৩০ মিনিটের মধ্যে চার্জ দেয়া সম্ভব। ইউরোপ এবং আমেরিকার চার্জিং স্টেশনগুলো অত্যাধুনিক হওয়াতে এখানে চার্জ দেয়ার পাশাপাশি যাত্রীদের রিফ্রেশমেন্ট এর ব্যবস্থা থাকে। ফলে ৩০০ কিলোমিটার এক টানা যাওয়ার পর ৩০ মিনিটের যাত্রা বিরতি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে না।
পেট্টোল যানের এক হাজার কিলোমিটার যেতে গড়ে যেখানে ৫ হাজার ৩৭৫ টাকা খরচ হয় সেখানে বৈদ্যুতিক যানবাহনের লাগবে ১২৫০ টাকা। বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের যান্ত্রিক দক্ষতা পেট্রোল যানের তুলনায় অনেক বেশি। সভায় সমন্বিতভাবে কাজ করার আশা ব্যক্ত করা। বিআরটিএ-এ জানায়, বৈদ্যুতিক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলমান।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বৈদ্যুতিক যানবাহনের চার্জিং নীতিমালা গ্রাহকবান্ধব হতে হবে। পুরো বিশ্বে বর্তমানে অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো বৈদ্যুতিক গাড়ি। চার্জিং স্টেশন কেমন হবে, কি ধরনের ট্যারিফ নির্ধারণ হবে, যানবাহনের সার্বিক তথ্য কোথায়-কিভাবে সংরক্ষিত হবে, এসব বিষয়গুলো নির্ধারণ করে আমাদের প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।
অন্যান্যের সাথে বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল-এর চেয়ারম্যান (সচিব) সত্যজিত কর্মকার, স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর চেয়ারম্যান মে.জে. মঈন উদ্দিন (অব.), পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দপ্তর প্রধানরা সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন।
Be the first to comment