রশিদ মামুন:
চীন ভারতের কারণে এশিয়ার বাজারে বাড়ছে তরলীকৃত প্রাকুতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। এশিয়ার জনবহুল দুই দেশের অব্যাহত চাহিদা বৃদ্ধিতে এখন প্রতি এমএমবিটিউ এলএনজি বিক্রি হচ্ছে ২০ ডলারে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে যা ছিল ১৪ ডলার। আর এতেই দেশের গ্যাস খাত সংকটে পড়েছে ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, অতিমারির পর এশিয়ার সব চাইতে বড় দুই দেশ পুরোদমে শিল্প উৎপাদন শুরু করেছে। চীনই আগের তুলনায় ১১ ভাগ এলএনজি বেশি আমদানি করছে। বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমাতে চীন ২০৪০ সাল নাগাদ যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তার প্রেক্ষিতেই এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করে চলেছে দেশটি। ভারতও করোনার পর বন্ধ কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। এই কারণে এশিয়ার বাজারে এলএনজির দাম বেড়েছে।
সিঙ্গাপুরে এলএনজির স্পট মার্কেট সূত্র বলছে, গত আগষ্টের মাঝামাঝি সেখানে এলএনজির দাম বাড়তে শুরু করে। হঠাৎ করে প্রতি এমএমবিটিইউতে দাম দেড় ডলার বেড়ে ১৪ ডলারে দাড়ায়। এরপর একটু একটু করে এই দাম বেড়েই চলেছে। এখন যা ২০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্বে এলএনজি বাণিজ্যের ইতিহাসে এই দাম সর্বোচ্চ বলে জানা গেছে।
বিশ্বের জ্বালানি সংকটের সহজ সমাধান হিসেবে এলএনজি ব্যবহার বাড়ছে। এখন সারা বিশ্বে ৩৬০ মিলিয়ন টন এলএনজি ব্যবহার হচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে ২০৪০ নাগাদ এটি বেড়ে ৭০০ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে। ফলে দ্বিগুন এই চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে বিশ্বে এলএনজির দামও পাল্লা দিয়ে বাড়বে। ফলে দেশের জ্বালানি ব্যবহার নীতিতে এখনই নানামুখি চিন্তা না করা হলে হুট করেই সংকটে পড়তে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন দিন দিন কমছে। নতুন যে গ্যাস ক্ষেত্র গুলো রয়েছে সেগুলোও আশা জাগানোর মতো নয়। এখন সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান শুরুই হয়নি। ফলে আমদানি নির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে আরো সতর্ক চিন্তা করতে হবে।
মহেশখালির দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে প্রতিদিন এলএনজি রূপান্তর করে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা সম্ভব। চাহিদা বাড়লে ৮৫০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে সবক্ষেত্রেই সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ৪৫ দিন এলএনজি আমদানি করা হবে না। অতিরিক্ত দামের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে এরমধ্যে দাম কমে যেতে পারে।
এলএনজি আমদানি কম হওয়াতে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়েছে পেট্রোবাংলা। দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোর দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ২ হাজার ২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে পেট্রোবাংলা এক হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে আসছিল। তবে এলএনজি আমদানি কমার কারণে আজ এই সরবরাহের পরিমান ছিল এক হাজার ৮৭ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে অনেকগুলো গ্যাস চালিত কেন্দ্রকে আপাতত বন্ধ রাখতে হয়েছে পিডিবিকে।
Be the first to comment