আহমেদ রক্তন:
আকষ্মিক স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এর দাম বেড়ে যাওয়ার খেসারত দিচ্ছে পেট্রোবাংলা। সিঙ্গাপুরের স্পট মার্কেট থেকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) সর্বশেষ প্রতি এমএমবিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজি কিনছে ২৯ দশমিক ৮৯ ডলারে। আবারও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার আগ্রহ পত্র চাইলে তাতে ৩৫ ডলার দাম হাকিয়েছে সরবরাহকারীরা। এতটা বাড়তি দরের এলএনজি কিনে কম দামে বিক্রি করলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেটের বদলে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি কেনা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশে এখন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। এই দুটি টার্মিনালের বার্ষিক সরবরাহ ক্ষমতা ৭ মিলিয়ন টন। কিন্তু সরকার এলএনজি আমদানির জন্য কাতার এবং ওমানের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তাতে বছরে সর্বোচ্চ ৪ মিলিয়ন টনের এলএনজি সংস্থান হতে পারে। অর্থাৎ বাকি তিন মিলিয়ন টন এলএনজি স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু স্পট মার্কেটের এলএনজির দাম নির্ভর করে চাহিদার উপর। চাহিদা বেড়ে গেলে দামও বেড়ে যায়। এখন যে সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে।
এই সংকটের সমাধান হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির উপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মনে করা হচ্ছে এলএনজির সরবরাহ ক্ষমতা এবং দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির মধ্যে একটি বড় ফারাক রয়েছে। যা স্পট মার্কেট থেকে মেটানো হচ্ছে। ফলে সব সময় দামের হিসেবটি ঠিক থাকছে না। কোন কোন সময় দাম বেড়ে গেলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, সরকারের উচিত এলএনজি আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা। এখন এ ধরনের যে চুক্তি রয়েছে তাতে ৪ মিলিয়ন টন এলএনজি আসছে। এটা আরো বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, গত দুই আড়াই বছরে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে এতে করে বেশি বেশি এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। সরকারের উচিত দেশে তেল গ্যাসের অনুসন্ধানে জোর দেয়া।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আগে থেকে কাতার এবং ওমানের সঙ্গে এলএনজি আমদানি চুক্তি রয়েছে। এর বাইরেও এলএনজি রফতানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। ওইসব দেশগুলো বাংলাদেশের এলএনজিখাতে বিনিয়োগেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে সরকার চাইলে এসব দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। দেশেও সামিট গ্রুপ এবং টোটাল গ্যাস এলএনজি বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। ফলে তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে নেগোসিয়েশন করা যেতে পারে।
জ্বালানি সচিব মো. আনিছুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের বার্ষিক যে সরবরাহ পরিকল্পনা ছিল তাতে পাঁচটি কার্গো ধরা ছিল। কিন্তু সেটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সংকটটা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জুলাই মাসে যে কার্গো আসবে বলে মনে করেছিলাম সেটা এসেছে আগস্টের ৪ তারিখে। এরপর আমরা ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজির সরবরাহ কমিয়ে দেই। তাতে দেশে ব্যাপক গ্যাস ঘাটতি দেখা দেয়। এই কারণে আমরা দ্রুত এলএনজি নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, এখন আমরা আগামী মাসে যে এলএনজি আনবো সেটির দাম হবে ৩২ থেকে ৩৬ ডলার প্রতি এমএমবিটিইউ। কিন্তু কিছু করারও নেই। আমাদের শিল্প বাঁচাতে হলে বেশি দামে এলএনজি আমদানি করতেই হবে। আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
সরকার মহেশখালির বাইরে পায়রাতে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি টার্মিণাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে। সেখানে দুটি টার্মিণাল নির্মাণ করা হবে। টার্মিনাল দুটি প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে। সেখানেও এলএনজি সরবরাহের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির প্রয়োজন পড়বে।
Be the first to comment