কুড়ে ঘরের কুপি জ্বলছে হিসেব কষে

রশিদ মামুন:
ডিজেলের সঙ্গে কেরশিনের দর বৃদ্ধিতে কুড়ে ঘরের কুপি জ্বলছে হিসেব করে। জীবন মান উন্নয়নের জন্য আলো প্রয়োজন। কিন্তু সেই আলো জ্বালবার তেলের দর বৃদ্ধি শঙ্কা সৃষ্টি করেছে প্রান্তিকের জীবনে। চরের বা দুর্গম পাহাড়ের যে শিশুটি সন্ধের পর কেরশিনের আলো জ্বেলে পড়তে বসতো তার উপর গিয়ে পড়ছে বাড়তি দামের খড়গো।

এখনও যেখানে বিদ্যুতের আলো পৌছায়নি সেসব এলাকার মানুষই কেরশিনের প্রধান ভোক্তা। সন্ধ্যের পর কুপি বা হারিকেন জ্বালতে তাদের হাতে বিকল্প কোন উপায় থাকে না। কেউ কেউ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও খুব বেশি সময় সেখান থেকে আলো পাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক তেলের দাম বৃদ্ধির সময় ডিজেলের সঙ্গে কেরশিনের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশ ভারতে পাচার হওয়ার কারণেই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

সরকার দাবি করছে সারাদেশের ৯৯ ভাগের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় এসেছে। অর্থাৎ দেশে কেরশিনের ব্যবহার কমে আসার কথা। কমেছেও, কিন্তু কতটা। হিসেব বলছে ২০১১ সালে দেশে কেরশিন আমদানি করা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৫৯৮ টন। ২০১৪ সাল থেকে দেশে আর কেরশিন আমদানি হয়নি। এখন ইস্টার্ন রিফাইনারী এবং দেশের পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাওয়া কেরশিন দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো হয়। ২০২১ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারী ক্রড অয়েল পরিশোধন করে ৮৩ হাজার ১৫৭ মেট্রিকটন কেনশিন সরবরাহ করেছে। পুরোচিত্র যদি বিশ্লেষন করা হয় তাহলে দেখা যায় গত ৯ বছরে দেশে কেরশিনের চাহিদা কমেছে ৬৪ ভাগ। কিন্তু এরপরও বছরে প্রায় এক লাখ টন কেরশিন কুপি বাতি জ্বালাতে ব্যবহার হয়।

বিপিসির তথ্য বলছে একমাত্র ন্যাপথা ছাড়া তারা আর কোন পন্য রপ্তানি করে না। তাহলে ইস্টার্ন রিফাইনারী আর বেসরকারি পরিশোধনাগারের পুরোটা কেরশিন দেশের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার হয়। ডিজেল প্রতিবেশী দেশে পাচার হয় বলেওই দাম বাড়ানো হলে কেরশিনের দাম কেন বাড়ানো হলো। অতীতে একবার ডিজেলের দাম বাড়িয়ে কেরশিনের কম রাখা হয়েছিল। তখন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডিজেলের মধ্যে কেরশিন ভেজাল দেয়া শুরু করে। এরপর বিপিসি কেরশিনকে নীল রঙের করে দেয়। এখনও যদি একই যুক্তি খাড়া করা হয় তাহলে তা দুঃখ জনক বলেই মনে করা হবে।

দেখা যাক দেশের রাজস্ব বিভাগ এই প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে লিটার প্রতি কতটা ভ্যাট ট্যাক্স আদায় করছে। গত ৩ নভেম্বর জ্বালানির দাম বৃদ্ধির যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যায় লিটার প্রতি ১১ টাকা ৪৪ পয়সা কর আদায় করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৯ টাকা ৮৫ পয়সা মূসক এবং ১ টাকা ৫৭ পয়সা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকৈ আদায় করা হচ্ছে। যার পুরোটাই আবার ভোক্তার কাছ থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে। ভারত সম্প্রতি জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়াতে করে ছাড় দিয়েছে। দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকারও কেরশিনের কর তুলে নিলে আর দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়তো না। এক্ষেত্রে সরকারের বিপুল লোকশান না হলেও কুড়ে ঘরের কুপির স্বস্তি মিলতো।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.