নিজস্ব প্রতিবেদক:
উচ্চ আদালতের আদেশের ভুল ব্যাখ্যা করে পাবনায় সরকারি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প ঠেকিয়ে দিতে মাঠে নেমেছে বিএনপি সাগরকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আরশাদ আলি সরদার। সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্পের জমি দখলের জন্য মাইকিং এবং সমাবেশ করেছে এই বিএনপি নেতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য দেশের সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) পাবনার সুজানগরে একটি ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করছে। সরকার এজন্য চর রামকান্তপুর মৌজায় ২০৫ একর খাস জমি দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দিয়েছে।
চররামকান্তপুর মৌজা ভূমি জরিপের সময় আরশাদ আলি সরদার জপির প্রক্রিয়া সঠিক হচ্ছে না উল্লেখ করে জেলাপ্রশাসক বরাবর ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন জরিপ প্রক্রিয়া আইন সঙ্গত হচ্ছে না। পাবনা জেলা প্রশাসক ওই সময় আরশাদ আলিকে ডেকে তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ আছে কি না তা দেখাতে বলেন। আরশাদ আলি তখন কোন ধরনের কাগজ উপস্থাপন করতে পারেননি। জেলা প্রশাসক তখন এ ধরনের আবেদন করে সময় ক্ষেপন না করার অনুরোধও করেন তাকে। পরবর্তীতে জেলাপ্রশাসকের কাছে করা আবেদনটি শুনানি করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি উচ্চ আদালতের একটি রিট আবেদন করেন। গত ১১ নভেম্বর বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ বিষয়ে একটি রুল জারি করেন। ওই রুলে কেন তার আবেদনের শুনানি না করা অবৈধ হবে না, তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানানোর জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে তার আবেদনের শুনানি করে নিস্পত্তি করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
আদালত এই আদেশ দেয়ার পর আরশাদ আলি এলাকায় এসে মাইকং করে প্রচার করেছে এই চরের জমি উচ্চ আদালত থেকে তাকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি সমাবেশ করেও বলেছেন সব জমি দখল করে নিতে হবে। সরকারের কোন বিধান নেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি ইজারা দেয়ার। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্থানীয় কর্মিদের চাকরি ছেড়ে এলাকা থেকে চলে না গেলে হত্যা করারও হুমকি দিয়েছেন এই বিএনপি নেতা। গত ২০ ডিসেম্বর সরকারি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে গিয়ে জোর করে সমাবেশ করেন।
স্থানীয় বসিন্দা সালাম পরামানিক বলেন, সমাবেশে আরশাদ আলী বলেছে আদালত আমাদের এই জমি দিয়ে দিয়েছে। ফলে তোমরা সবাই এই জমি দখল করে নেও। তবে জমি দখল করার আগে উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য পাঁচ লাখ টাকা খরচ হিসেবে সকলকে ভাগ করে দিতে বলেন।
পাবনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জমিটি বন্দোবস্তের পর এখানে এখন সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। সূত্র বলছে পাবনার সাগরকান্দি ইউনিয়নের ১২টি মৌজাতে সরকরি খাস জমি রয়েছে। মূলত পদ্মা থেকে জেগে ওঠা এসব চরে কোন দিনই ভূমি জরিপ হয়নি। এসব চরে কয়েক হাজার একর খাস জমি রয়েছে। যা স্থানীয় এক শ্রেনীর প্রভাবশালীরা দীর্ঘ দিন দখল করে রেখেছে।
আরশাদ আলী সরদারও এখানের চর কেষ্টপুর মৌজা নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মৌজাটিতে ৭০০ বিঘা খাস জমি রয়েছে। স্থানীয়রা বলছে আরশাদ আলী সরদার জমিদারি প্রথার কিছু ভূয়া কাগজ তৈরী করে চরটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। শুধু এই চরের নয় চররামকান্তপুর মৌজারও ভূয়া কাগজ তৈরী করেছেন এই স্থানীয় ভূমি দস্যু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, আমরা যথাযথ নিয়োম অনুশরন করে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়েছি। আদালতের আদেশের কপি আমাদের কাছে এসেছে আমরা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।
আরশাদ আলি সরদার বলেন, খাস জমি আমাদের না দিয়ে সরকারের বন্দোবস্ত দেয়ার কোন বিধান নেই। নদী থেকে চর জাগলে তা আমাদেরই দিতে হবে। সরকারের নিয়ে যাওয়ার কোন আইন নেই।
জানাগেছে সাগরকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের এসব জমিদারি আমলের চিটা সংগ্রহ করে জালজালিয়াতি করতো। আব্দুল কাদেরের মৃত্যুর পর তার শিষ্য এই আরশাদ আলি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় জাল জালিয়াতি করে আসছে। এলাকায় তাকে মামলাবাজ আরশাদ আলি নামেই চেনে সাধারণ মানুষ।
Be the first to comment