নিজস্ব প্রতিবেদক :
সম্প্রতি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি পরিচালিত বিবিয়না গ্যাস ক্ষেত্রের ছয়টি কূপে হঠাৎ করে বালি আসার কারণ কী, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ২৫তম বৈঠক এ সংক্রান্ত সুপারিশ করা হয়। রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশও করা হয় বৈঠকে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ি, বালি আসায় বিবিয়ানার ছয়টি কূপের গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানীসহ সারাদেশের গ্যাস সরবরাহে সংকট তৈরী হয়।
কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান রাতে একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, হঠাৎ করে তো আর বালি আসেনি। আগে থেকে এ বিষয়ে কোন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে কি না, এমনটি অন্যান্য কূপের ক্ষেত্রে হতে পারে কি না বা অন্যান্য গ্যাস ক্ষেত্রের কূপগুলোতেও হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, এ বিষয়গুলো আমাদের জরুরিভিত্তিতে জানা প্রয়োজন। নয়ত বড় ধরণের সংকট নেমে আসতে পারে।
উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করে শেভরন। গত কয়েক বছর পেট্রোবাংলার তথ্য তাই বলছে। একাধিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোডাকশন ক্যাপাসিটির চেয়ে বেশী গ্যাস তুললে গ্যাস কূল সাট ডাউন হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, এসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা সব বিষয়ে খতিয়ে দেখতে বলেছি।
দেশে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনের। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর উপর নির্ভরশীলতা আগে থেকেই । জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা না বাড়ানোর হলে অচীরেই দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
সম্প্রতি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি পরিচালিত বিবিয়না গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাস উৎপাদন হঠাৎ কমে কমে যায়। এতে রাজধানীর অনেক এলাকায় বাসা-বাড়ির রান্না বন্ধ হয়ে যায় গ্যাস না থাকায়। চাহিদা অনুযায়ি গ্যাস না পেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হয়। কয়েকদিনের প্রচেষ্টায় প্রকৌশলীরা মেরামতের মাধ্যমে সংকট উত্তোরণের চেষ্টায় কিছুটা সফল হয়।
বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে দেশে দৈনিক প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এরমধ্যে বিদেশী কোম্পানি শেভরন ও তাল্লো উত্তোলন করে প্রায় ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড উত্তোলন করে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি আমদানীর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে কমিটি সদস্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, এস এম জগলুল হায়দার, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, মোছা. খালেদা খানম এবং মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাস বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
ভোলায় আবিস্কৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ, উত্তোলন ও ব্যবহারের বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনা এবং গ্যাসের নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন প্রতিস্থাপন সম্পর্কে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন প্রতিস্থাপনের জন্য সরেজমিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। বৈঠকে ২৩তম বৈঠকের কার্যবিবরণী নিশ্চিত করা হয় এবং ২৩তম বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাসমূহের প্রধান, মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Be the first to comment