নিজস্ব প্রতিবেদক :
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দর প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় এই বরাদ্দ এক হাজার ৪১৮ কোটি টাকা কম। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিলো ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। আজ জাতীয় সংসদে আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী অর্থ বছরের বাজেট ঘোষনা করেন।
বাজেট ঘোষনায় জানানো হয়, এরমধ্যে বিদ্যুতে ২৪ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা এবং জ্বালানিতে ১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা জ্বালানিতে উন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বছর বিদ্যুৎ জ্বালনিতে উন্নয়ন বরাদ্দ মোট বাজেটের তিন দশমিক নয় শতাংশ।
বিগত ১৩ বছর ধরে বিদুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে দেশে সম্প্রতি মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) ২৫, হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। জমির প্রাপ্যতা, জ্বালানি পরিবহন সুবিধা এবং লোড সেন্টার বিবেচনায় পায়রা, মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকাকে পাওয়ার হাব হিসেবে চিহ্নিত করে বৃহৎ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরমধ্যে কয়লাভিত্তিক পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শেষে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যিক উৎপাদন উদ্বোধন করেছেন।
এছাড়াও কয়লাভিত্তিক রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিকাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পুরোদমে চলছে।
রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
এর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে প্রায় ৭৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। মোট চাহিদার শতকরা ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌর শক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে অচিরেই দেশের সকল মানুষের জন্য মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বাজট অধিবেধনে বলা হয়, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব সুষ্ঠ বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। উক্ত ক্রমবর্ধিষ্ণু চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে মানসম্মত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। কাজেই সবার জন্য বিদ্যুৎ পৌঁছানো ও দেশজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নিরাপদ ও টেকসই জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।
বিগত ১৩ বছরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট-আওয়ার হতে ৫৬০ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করতে পেরেছি। এ সময়কালে ৫ হাজার ২১৩ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন এবং ৩ লাখ ৩৬ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ১৪ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে সরকার সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নেও গুরুত্ব দিচ্ছে। পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং গোপালগঞ্জ-রামপাল ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনদুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ইতোমধ্যে কমিশনিং করা হয়েছে। এছাড়া, মোংলা-খুলনা (দক্ষিণ) ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের ৭.৫ কিমি পদ্মা রিভার ক্রসিং অংশের পদ্মা রিভার বেডের ৭টি টাওয়ারের ফাউন্ডেশনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ৪০০ কেভি ও ২৩০ কেভি ভোল্টেজের ৬টি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
দেশের জ্বালানি তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড-এর শোধন ক্ষমতা আরও ৩০ লক্ষ টন বৃদ্ধির জন্য ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক পরিশোধন ক্ষমতা ৪৫ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি জ্বালানির চাহিদাও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার একটি বড় অংশ মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। দেশে আবিষ্কৃত ২৮টি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টিতে উৎপাদন চলছে। ২০০৯ সালে দেশে দৈনিক ১,৭৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হতো যা বেড়ে বর্তমানে ২ হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে। পাশাপাশি গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণে দৈনিক প্রায় ৬০০ থেকে ৭৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) হিসেবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে।
Be the first to comment