বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনের হিসাব মিলছে না

ডেস্ক প্রতিবেদন :
মানচিত্রের সঙ্গে বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনের হিসাব মিলছে না। দেশে নতুন করে বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা শুরুর এই চিত্রকে খুব একটা আশাব্যঞ্জক মনে করা হচ্ছে না। তবে আরও নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করে এসব প্রকল্প নেওয়া উচিত বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

দেশের সবচেয়ে বড় কক্সবাজারের ৬০ মেগাওয়াটের বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশির ভাগ সময় উৎপাদন হয় না। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও, কিছু সময় একেবারে উৎপাদনহীন অবস্থায় থাকে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) উৎপাদন চার্ট ধরে গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘণ্টাপ্রতি উৎপাদন চিত্র ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, শীতকালজুড়েই কেন্দ্রটির উৎপাদন আশা জাগানোর মতো ছিল না। তবে ফেব্রুয়ারির শেষে এসে উৎপাদন কিছুটা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর সকাল ৭টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ছিল শূন্য মেগাওয়াট। একই দিন দুপুর ১২টায় ছিল শূন্য মেগাওয়াট। তবে কেন্দ্রটি যে একেবারে উৎপাদন করেনি তা নয়। কেন্দ্রটি ১৭ ও ১৮ নভেম্বর দুই দিনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় সর্বোচ্চ ২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।

এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৩ ঘণ্টা একেবারেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। বাকি ৩৫ ঘণ্টার মধ্যে ১৩ ঘণ্টা ১০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। বাকি ২২ ঘণ্টার উৎপাদন একবারও ১০ মেগাওয়াটের ওপরে ওঠেনি। বেশির ভাগ সময় ৩, ৪ কিংবা ৬, ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে ৬০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি।

উৎপাদন চার্টে আরও দেখা যায়, ১৮ ও ১৭ নভেম্বরের মতোই চিত্র ছিল গত চার মাসের। এর মধ্যে ডিসেম্বর ও জানুয়ারির বেশির ভাগ সময় কেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি।

গত ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি সময়ের মধ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় কেন্দ্রটি উৎপাদন করেছে শূন্য মেগাওয়াট। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টায় কেন্দ্রটি উৎপাদন করেছে সর্বোচ্চ (এই দুই দিনের) ৪৩ মেগাওয়াট। এই দুই দিনে কেন্দ্রটি ৩১ ঘণ্টা ১০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। ফেব্রুয়ারিতে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকায় কেন্দ্রটির উৎপাদন বেড়েছে। তবে কোনও কোনও সময় বাতাস না থাকলে কেন্দ্রটি শূন্য মেগাওয়াট উৎপাদন করে।

বিদ্যুৎ যেহেতু দেশে সঞ্চয় করে রাখা হয় না, তাই এ ধরনের কেন্দ্র নির্মাণ করলে বিকল্প উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকতে হয়। কেবল বায়ু বিদ্যুৎ দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার গ্রিডে কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্রর উৎপাদন কমে গেলে বিকল্প বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হয়।

এখন ধরা যাক বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এখন হুট করে কেন্দ্রটির উৎপাদন কমে গেলে বিকল্প জ্বালানির কেন্দ্র চালাতে হয়। অর্থাৎ এখানে বিদ্যুতের জোগানোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাইরে আবার জীবাশ্ম জ্বালানির কেন্দ্র নির্মাণ করতে হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে দ্বিগুণ বিনিয়োগ হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) এক গবেষণায় জানায়, বাংলাদেশের উপকূলে কমপক্ষে ১০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্তও হতে পারে।

এনআরইএল ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৯টি স্থানে উইন্ড ম্যাপিংয়ের কাজ করে সরকার। এই ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এসব তথ্য পাওয়ার দাবি করে তারা। কিন্তু বাস্তবে সবচেয়ে বায়ুর প্রবাহ রয়েছে, এমন জায়গাতে কেন্দ্রটি নির্মাণ করে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ বছরজুড়েই বিদ্যুৎ মিলবে, এমন আশা দেখা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের উচিত আরও নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করে এসব প্রকল্প নেওয়া। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে জ্বালানি খরচ নেই বলে এই ধরনের কেন্দ্রকে আমরা উৎসাহিত করি। কিন্তু বছর শেষে যদি দেখা যায়, কেন্দ্রটি থেকে বার্ষিক ১৭ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি, তবে সেটি হবে দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, এত বড় কেন্দ্র একসঙ্গে করার আগে বেশি করে তথ্য নিতে হতো। কোথা থেকে তথ্য নিয়ে এত বড় কেন্দ্র করা হলো, তা এক আশ্চর্যের বিষয়ও বটে।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.