নিজস্ব প্রতিবেদক :
আশুলিয়ায় গ্যাস সঞ্চালন লাইন ফেটে গেছে। এতে আশুলিয়া, সাভার, মিরপুর, মোহম্মদপুর এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভোর থেকে গ্যাস না থাকায় এসব এলাকার লোকজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার পর কোনও এক সময় আশুলিয়ায় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) এর একটি সঞ্চালন লাইনের মধ্যে অবস্থিত গ্যাসকেট (লাইনের ভেতরের কিছু অংশ ফাঁকা থাকে, এই ফাঁকা অংশ গ্যাসকেট দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়) ফেটে গেছে। এতে আশেপাশের এলাকায় বিশেষ করে এই লাইন দিয়ে যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হয় সেসব জায়গায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মেরামতের জায়গা নির্ধারণ করে সকাল ৮টার দিকে মেরামত কাজ শুরু করা করেছে।
জিটিসিএল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা আশুলিয়া ও আমিনবাজার এলাকায় সিজিএস প্ল্যান্ট থেকে তিতাস গ্যাস সিস্টেমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
এদিকে শনিবার সকালে তিতাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আজ সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য আশুলিয়া ও আমিনবাজার সিজিএস প্ল্যান্ট থেকে তিতাস সিস্টেমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এর ফলে আশুলিয়া, সাভার, আমিনবাজার, গাবতলী, মিরপুর, পাইকপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, শ্যামলী, রিংরোড, মনসুরাবাদ, কাদিরাবাদ, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, আজিমপুর, হাজারীবাগ এবং তদসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে বা গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে।
ভোগান্তি:
সকাল থেকে শুকনো মুখে বসে আছি , এক কাপ চাও বানাতে পারিনি । চুলায় আগুন নেই । মানে গ্যাস নেই । অন্যদিন টিমটিম করে যা জ্বলে তাতে দিব্যি সকালের চা ইত্যাদি হয়ে যায় । আজ মোমবাতির শিখার চেয়েও ক্ষীণ শিখা জ্বলছে চুলায় । আজ আর নাস্তা খাওয়া হয়নি।
উত্তরার বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত কমকতা রিজিয়া ইভা সুলতানা এইভাবেই তার ভোগান্তির কথা জানান। এই ভোগান্তিতে শুধু ইভা নন একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানান এলাকার চার নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা রোকসানা মাজিয়া।
এদিকে মোহম্মদপুরের তাজমহল রোড থেকে শাহনাজ বেগম জানান, সকাল উঠেই দেখেন চুলায় গ্যাস নাই। হটাৎ করে গ্যাস না থাকায় বাসায় রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। এখন হোটেল থেকে খাবার এনে কোনমতে দিন পার করবেন। মোহাম্মদপুরের আরেক বাসিন্দা মোহম্মদ আব্বাস জানান, গ্যাস না থাকায় কেরোসিনের চুলায় রান্না হয়েছে আজ বাসায়। একই কথা জানিয়েছেন তছলিমা খাতুন। তিনি জানান, এমনিতেও গ্যাসের সমস্যা হলে ইন্ডাকশন চুলা ব্যবহার করেন। আজ সারাদিনের রান্নার কাজ করেছেন এই চুলাতেই।
মিরপুর থেকে বিপুল জানান, রাতে কোনো সমস্যা ছিল না। সকালে উঠে কাজের মেয়ে মুখে শুনলাম চুলায় কোনো আগুন নাই। গিয়ে দেখি একেবারেই গ্যাস নাই। আগেও গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। কিন্তু টিম টিম করে জলতো। আজ তো একেবারেই নাই। তিনি বলেন, শুনলাম পাইপ ফেটে গেছে। মেরামত করা হচ্ছে। কিন্তু তিতাসের উচিত ছিল বিকল্প ব্যবস্থা রাখা। তাহলে হঠাৎ করে নগরবাসীকে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
একই অভিযোগ করেছেন মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরিজীবী টিপু সুলতান। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পরিনি। আমার বাসায় গত ছয় বলেন বছরে এমন গ্যাস নাই দেখিনি। খোজ নিয়ে দেখলাম পুরো মিরপুর জুড়েই এই হাহাকার।
আজিমপুরে থাকেন তাসনিমা ইয়াসমিন। তিনি জানান, সকালে অামাদের বাসায় খুব অল্প পরিমাণে গ্যাস অাসছিল। সেটা দিয়েই অামরা সকালের নাস্তা করেছি। দুপুরের খাবার বাইরে খেতে হয়েছে।
মগবাজারে বেসরকারি চাকুরিজীবী রাজন সরকার জানান, দুপুরে অফিস থেকে বের হয়ে কয়েকটি হোটেল ঘুরে খাবার পাইনি। গ্যাস ছিল না বলে বেশিরভাগ হোটেলে আজ রান্না হয়নি।
এদিকে গ্যাস না থাকায় কিছু এলাকায় রেস্টুরেন্টের বাইরে খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইন দিতে দেখা যায়।বিশেষ করে মেস, হোস্টেলের শিক্ষার্থী ও ব্যাচেলরদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
Be the first to comment