গ্যাসের দাম দ্বিগুন করার প্রস্তাব জালালাবাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রের সবগুলোই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। তবে গ্যাসসমৃদ্ধ এই এলাকার মানুষের ব্যবহৃত গ্যাসের দামও প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে জালালাবাদ গ্যাস। বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সিলেট অঞ্চলের গ্যাস বিতরণকারী এই কোম্পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লসের পরিবর্তে জালালাবাদের সিস্টেম গেইন হচ্ছে। এই অবস্থায় তাদের গ্যাস দাম কেন বাড়াতে হবে?’
জালালাবাদের পক্ষ থেকে আবাসিকে এক চুলার বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি। অন্যদিকে যারা গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে ৯ টাকা ১০ (ঘনমিটার) পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৪১ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে তারা। এছাড়া বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৭৪ পয়সা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ টাকা ১০ পয়সা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২ টাকা ৭১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৪৪ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা ৮৮ টাকা, শিল্পে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা ৪ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪ টাকা ৫ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে বক্তব্য দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. এহসানুল হক পাটোয়ারি।
এর বিপরীতে কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি জানায়, গ্যাস বিবরণ ট্যারিফ নির্ধারণ পদ্ধতি মোতাবেক রেট বেজের ওপর রিটার্ন বিবেচনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে জালালাবাদ গ্যাসের প্রাক্কলিত নিট রাজস্ব চাহিদা প্রতি ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ০৭৫১ টাকা। কমিশনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের গত ১৬ অক্টোবর জারি করা বিইআরসি আদেশ ২০১৮০৫-এর মাধ্যমে জালালাবাদ গ্যাসের বিতরণ চার্জ প্রতি ঘনমিটারে শূন্য দশমিক ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা ২০১৮ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এ অবস্থায় ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ হওয়ার পর প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে সুন্দরবন গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ পুনর্নির্ধারণ করা যথাযথা হবে বলে টেকনিক্যাল কমিটি মনে করছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘শুনানিতে সবার বক্তব্য শোনা হচ্ছে। পরে পর্যালোচনা করে গ্যাসের দামের বিষয়ে কমিশন আদেশ দেবে।’
জ্বালানি বিভাগের যুগ্মসচিব জহির রায়হান বলেন, ‘শুনানিতে ভোক্তারদের বেশি আপত্তি পাওয়া যাচ্ছে। এখানে সামান্য বাড়লেও নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জীবনযাপনে বড় প্রভাব ফেলে। এই বিষয়টি কমিশন বিবেচনা করে দেখতে পারে। সংস্থাগুলোর দুর্নীতির বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ খতিয়ে দেখবে বলে তিনি জানান।
শুনানিতে কমিশনের সদস্য রহমান মুর্শেদ, সদস্য মাহমুদউল হক ভুইয়া, সদস্য মিজানুর রহমান ও সদস্য আব্দুল আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১৪ মার্চ সকালে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং দুপুরে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি করবে কমিশন। এর মাধ্যমেই শেষ হবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ওপর চার দিনব্যাপী গণশুনানি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.