বিশেষ প্রতিবেদন:
অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার দীর্ঘমেয়াদী তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে বলা হচ্ছে ২০৩৫ সালের মধ্যে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট করা হবে। দেশের স্থলভাগে গ্যাসের মজুদ কমে আসায় এলএনজি দিয়ে আগামী দিনে গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা হবে। তবে বিপুল পরিমাণ এলএনজি আনার ফলে গ্যাসের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাগরে নতুন কোন গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেলে এলএনজি আমদানির পরিকল্পনায় কাটছাঁট হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। জ্বালানি বিভাগ সম্প্রতি এলএনজি আমদানির যে পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপনের জন্য তৈরি করেছে তাতে বলা হয়েছে ২০৩৫ সালে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করতে হবে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে গত বছর থেকে ভাসমান একটি এলএনজি টার্মিনাল গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে। টার্মিনালটির রিগ্যাসিফিকেশন (এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর) ক্ষমতা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। টার্মিনালটি ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করছে। এলএনজি টার্মিনালটি সর্বোচ্চ দৈনিক ৫২০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ করছে। টার্মিনালটি নির্মাণ করেছে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। আগামী মাসে অর্থাৎ মধ্য এপ্রিল থেকে আরও একটি একই ক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। টার্মিনালটি নির্মাণ করছে দেশের সামিট গ্রুপ। এলএনজি টার্মিনালটির জন্য সাবসির (সাগরের মধ্যের পাইপ লাইন) কাজ শেষ হয়েছে। তবে আনোয়ারা মহেশখালী সমান্তরাল পাইপ লাইন কাজ শেষ না হাওয়াতে সামিটের এলএনজির পুরোটা জাতীয় গ্রিডে আসতে কিছুটা সময় ধৈর্য ধরতে হবে। তবে সামিটের সাবসি পাইপ লাইন থেকে একটি পাইপ লাইন নির্মাণ করে পুরনো পাইপ লাইন দিয়ে দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। আর সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনালটির পুরো সুবিধা পেতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে জিটিসিএল বলছে তারা এপ্রিলের শেষ মে মাসের শুরুতেই সমান্তরাল পাইপ লাইন নির্মাণ শেষ করতে পারলে আরও আগে এই এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। এতে করে দেশে গ্যাসের সঙ্কট থাকবে না।
এখন দৈনিক চাহিদা তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে সরবরাহ করা হচ্ছে তিন হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট থেকে যাচ্ছে। যা চলতি বছরের শেষ নাগাদ সমাধান হয়ে যাবে বলে সরকার আশা করছে।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, দেশের স্থলভাগে আর বড় মজুদ নেই। আর সাগরে কতটুকু গ্যাস রয়েছে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোন ধারণা নেই। ফলে এলএনজি আমদানি করেই দেশের প্রাথমিক জ¦ালানির সরবরাহ নিশ্চিত করার চিন্তা করা হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় দেখা যায়, কক্সবাজারের মাতার বাড়িতে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির জন্য একটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর প্রথম ইউনিট নির্মাণ শেষে চালু হবে ২০২৩ সালে। দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে সময় লাগবে আরও সাত বছর। এরপর ২০৩০ সালে উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট। যাতে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বাড়বে। একইভাবে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর এলাকাতে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল উৎপাদনে আসবে। আশা করা হচ্ছে ২০৩৫ সাল নাগাদ টার্মিনালটি এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করতে পারবে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু সারাদেশে গ্যাস নেটওয়ার্ক রয়েছে তাই এলএনজি সরবরাহ খুব কঠিন কোন বিষয় হবে না। এলএনজি আমদানির জন্য শুধু টার্মিনাল এবং জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগকারী পাইপ লাইন নির্মাণ করলেই জ¦ালানি সরবরাহ করা যাবে।
তবে এলএনজি আমদানিতে দর কি পরিমাণ বাড়বে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। পেট্রোবাংলা বলছে গত বছর এলএনজি সরবরাহ করতে গিয়ে তারা নয় হাজার কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে। আর বছর জুড়ে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করতে হলে সরকারের ঘাটতি হবে ২৪ হাজার কোটি টাকা। তবে দৈনিক পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করলে গ্যাসের দাম কতটা বৃদ্ধি করতে হবে। আর সরকারের ঘাটতিই বা কত হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ কি পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বা কমে তার ওপরই দাম নির্ভর করছে।
সৌজন্যে, জনকণ্ঠ
Be the first to comment