তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে জ্বালানি বিভাগ

তিতাস গ্যাস কোম্পানি

তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিল এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় ট্রুথ কমিশনে দুর্নীতি স্বীকার করা ৯৬ কর্মকর্তার তালিকা চেয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। রোববার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী এ তালিকা চান বলে এক সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তিতাসের ২২টি খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে ১২টি সুপারিশ করে সংস্থাটি। বৈঠকে দুদকের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী দ্রুত তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এমনকি কারও কাছে অস্বাভাবিক সম্পদ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দেন তিনি। আবার ওয়ান-ইলেভেনের সময় ট্রুথ কমিশনে দুর্নীতি স্বীকার করা কর্মকর্তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।’

গত ১৭ এপ্রিল প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর হাতে তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ তুলে দেয় দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান। ওই সময় দুদক কমিশনার জানিয়েছিলেন, তারা দুর্নীতি প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারের ওপর জোর দিচ্ছে। ২৫টি সংস্থার ওপর অনুসন্ধান করা হয়েছে। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস অন্যতম। কোম্পানিটির অবৈধ সংযোগ, লোড বৃদ্ধি, সিস্টেম লস, এফডিআরসহ ২২টি খাতে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুদকের সুপারিশের সপ্তম দফায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী ট্রুথ কমিশনে যাওয়া তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভ্যাসগতভাবে অপরাধী। সেক্ষেত্রে তিতাস গ্যাসের যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ইতোপূর্বে ট্রুথ কমিশনে গিয়েছিলেন তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা উচিত নয়।

জানা গেছে, দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চান প্রতিমন্ত্রী। ফলে কপাল পুড়তে পারে ৯৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর। যাদের মধ্যে ৫৩ জন মিটার রিডার, ২০ জন ব্যবস্থাপক ও উপ-ব্যবস্থাপক, ২৩ জন অফিস, হিসাব ও বিক্রয় বিভাগের সহকারী। তারা দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হন।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোস্তফা কামাল বলেন, ‘হ্যাঁ, মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে অনেক আলোচনা হয়। তবে কার্যপত্র হাতে পেলে এ বিষয়ে বলা যাবে।’

তবে বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়েছেন কিনা, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

দুদকের রিপোর্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুদক ২০১১-১৭ সাল পর্যন্ত পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দিয়েছে। ফলে রিপোর্টের ভালো বিষয়গুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, বকেয়া বিল আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং দ্রুত প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রে কম গ্যাস সরবরাহ করে বেশি গ্যাসের দাম আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘আমরা দুদকের তদন্তকে স্বাগত জানাই। তাদের এ তদন্ত আমাদের সহায়তা করবে। আমরাও মনে করি অনেক ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘দুদক একটি ইনটেনসিভ রিপোর্ট দিয়েছে। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে দুদক কাজ করছে। শুধু জ্বালানি নয়, বিদ্যুতেও তদন্ত শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয়ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে।’

দুদকের তদন্তে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে অবৈধ সংযোগের। বিভিন্ন কারখানায় অবৈধভাবে লোড বাড়ানো হয়। অবৈধ সংযোগের কারণে সিস্টেম লস হয় ৬ শতাংশ। গৃহস্থালির চেয়ে শিল্পে বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী এলাকায় অবৈধ সংযোগের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.