ফণী: কোটি গ্রাহকের ঘর অন্ধকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (৩ মে) থেকে অনেক এলাকাতেই বিদ্যুৎ নেই। সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি গ্রাহকের ঘর অন্ধকার হয়ে পড়ে। এর ৮০ ভাগই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক। তবে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে কাজ শুরু করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২০৯টি বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে। এসব খুঁটি আবার তুলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে দুই সংস্থা।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।

শনিবার (৪ মে) বিকালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের হিসাব অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির মোট এক কোটি ৬০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল ৮১ লাখ ৬ হাজার ৫০০। সারাদেশে তাদের ১২৯টি পোল বা বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এছাড়া পিডিবির ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল এবং ফেনীর গ্রাহকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৮০টি বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় সোয়া দুই লাখের মতো গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন।

পিডিবি সূত্র বলছে, কয়েক দিন ধরে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও শুক্রবার দিনের বেলা ৭ হাজার ৭৯৮ মেগাওয়াট এবং রাতে আরও কমিয়ে ৭ হাজার ৫৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার দিনের বেলা আরও কমিয়ে ৪ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট আর রাতে সর্বোচ্চ ৭ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিতরণ স্বাভাবিক না হলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পিডিবি।

আরইবি জানায়, প্রতিদিন যেখানে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় সেখানে শনিবার বিকালে সরবরাহ ছিল মাত্র এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বিভিন্ন সমিতির মোট তিন হাজার ৭২৬ ফিডারের মধ্যে ১ হাজার ৬৩৩ ফিডার বন্ধ ছিল।

তবে সারাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পিজিসিবির কোনও ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিতরণ সমস্যার কারণে তারা অনেক স্থানে সঞ্চালন স্থগিত রেখেছে।

পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী বলেন, ‘আমাদের কোনও সাবস্টেশন বা কোনও লাইনের ক্ষতি হয়নি। বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের ত্রুটি সারিয়ে বিদ্যুৎ নিতে চাইলেই আমরা সরবরাহ করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার বিকালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেন, ‘বিকালেই আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি রাতের মধ্যে অনেক জায়গায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কোনও ক্ষেত্রে সম্ভব না হলে, কাল (রবিবার) সকালে পুরোটা ঠিক হয়ে যাবে।’

ঝড়ের সময় মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৗশলী মো. শফিক উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিকাল নাগাদ সব ফিডার চালু করেছি। এছাড়া শুক্রবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে কিছু লাইন ট্রিপ করে যায়, যা দ্রুত সারিয়ে ফেলা হয়েছে।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.