নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়েছে- সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে।
এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের বিশদ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এর বাইরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সরকারি উদ্যোগের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে ২৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর পরিচালন ব্যয় ৫০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানির উন্নয়ন বরাদ্দ এক হাজার ৯১৬ কোটি আর পরিচালন ব্যয় ৭০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।
বাজেটে বলা হয়- ১৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণাধীন পাঁচ হাজার ৮০১ ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলোর কার্যক্রম খুব শিগগিরই শুরু হবে। এছাড়া এক হাজার ৪১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও ১৯ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে সংরক্ষণ মেরামতের মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে একক জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে জ্বালানির বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
বাজেটে বলা হয়- সরকার ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এখন দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট বলে বাজেট বক্তৃতায় জানানো হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়- জমির প্রাপ্যতা, পরিবহন ও লোডসেন্টার বিবেচনায় নিয়ে পায়রা, মাতারবাড়ী ও মহেশখালীতে তিনটি বিদ্যুৎ হাব নির্মাণ করা হচ্ছে। রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রকল্প, মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রকল্প এবং পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প নির্মাণের কথা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, যৌথ বিনিয়োগে মহেশখালীতে ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াও রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এজন্য দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন সেখান থেকে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাইপলাইনে আনা সম্ভব। তবে এখন সেখান থেকে দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, একক জ্বালানি গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে জ্বালানির বহুমুখী ব্যবহারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ ভাগ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ ভাগ জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, মোট উৎপাদনের ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করা হবে। সরকারি-বেসরকারি ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন করা হচ্ছে। নেট মিটারিং গাইডলাইনের মাধ্যমে গ্রাহককে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ১১ হাজার ৪৯৩ সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইন পাঁচ লাখ আট হাজার কিলোমিটার। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে মোট সঞ্চালন লাইন ২৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার হবে। বিতরণ লাইন ছয় লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার হবে।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে স্থলভাগের সমুদ্র এলাকায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাপেক্স ২৪টি কূপের খননকাজ সম্পন্ন করেছে। সমুদ্রসীমায় চারটি ব্লকে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সই হয়েছে।
Be the first to comment