বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলক হলে ভোগান্তি হবে

বিদ্যুৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করের আওতা বাড়াতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন। তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। নসরুল হামিদ মনে করেন, এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের দরিদ্র মানুষের হয়রানি বাড়বে। শুধু তাই নয়, কর্মঘণ্টা অপচয়ের পাশাপাশি জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ বিষয়ে সোমবার (২৪ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে এক চিঠি লেখেন।তিনি চিঠিতে বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ইতোমধ্যে ৯৩ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।বর্তমানে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা সারাদেশে ৩ কোটি ৩৪ লাখ।এর মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এই গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ লাইফ লাইন গ্রাহক। অর্থাৎ এসব গ্রাহক মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। কিন্তু লাইন লাইফ গ্রাহকেরা খুবই দরিদ্র। অনেকেই আবার দিনমজুর। তাদের পক্ষে টিআইএন করা কষ্টদায়ক ও অমানবিক। তাছাড়া টিআইএন থাকলে প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। যা ওই দরিদ্র শ্রেণি লোকদের জন্য হয়রানিমূলক, কর্মকালের অপচয় এবং তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করি।’
চিঠিতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন থাকার প্রস্তাব প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানান।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভাগও সংযোগের জন্য টিআইএন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিকের ক্ষেত্রে একজন বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটিয়ার টিআইএন নম্বর না-ও থাকতে পারে। এছাড়া, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে এমনিতেই অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। ফলে গ্রাহকরা সংযোগ পেতে আরও ভোগান্তিতে পড়তে পারে। আর এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে নিম্নবিত্তরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে বলেও মনে করেন তারা।

বর্তমানে কেউ আবাসিকে নতুন বিদ্যুতের সংযোগ নিতে গেলে তাকে আবেদনপত্রের সঙ্গে আবেদনকারীর দুই কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের সত্যায়িত ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ লোড হলে সৌর প্যানেল স্থাপন করতে হবে। তবে কারো ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকলেও অনাপত্তিপত্র দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া যায়। আর বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্রের কপিও জমা দিতে হয়।

প্রসঙ্গত, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। আগামী ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে। আর নতুন অর্থবছরের নতুন বাজেট কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.