বিশেষ প্রতিবেদন:
কয়লা আমদানি এবং বিতরণের জন্য পৃথক কোম্পানি গঠনের চিন্তা করছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ নিজে কেন্দ্রের কয়লার চাহিদা মেটাতে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। সম্প্রতি এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, পৃথকভাবে সকল কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি না করে এককভাবে কোন কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলে তা আরও সহজ হবে। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কয়লা নিয়ে দুশ্চিন্তার অবসান হবে।
বলা হচ্ছে কয়লার উৎস নির্ধারণ, পরিবহন এবং কয়লা খালাস করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি সামলাতে বিশেষায়িত জনবল প্রয়োজন। কিন্তু দেশে যারা কয়লাচালিত কেন্দ্র নির্মাণ করছেন তাদের কারও এই বিষয়ে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। এখন যারা কয়লাচালিত কেন্দ্র নির্মাণ করছেন তারা পৃথকভাবে কয়লা আমদানির ব্যবস্থা করছেন। এতে করে এক একজন নিজেদের সুবিধামতো চুক্তি করছেন।
একটি এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য গড়ে বছরে সাড়ে তিন মিলিয়ন টন কয়লার প্রয়োজন হয়। এই হিসেবে ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাচালিত কেন্দ্রের জন্য বার্ষিক কয়লার প্রয়োজন ৩৫ মিলিয়ন টন। গত সোমবার ইন্দোনেশিয়ার পিটি বায়য়ান-এর সঙ্গে বিসিপিসিএলের যে চুক্তি হয়েছে তাতে পরিবহনসহ এক টন কয়লা বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮০ ডলার। এই হিসেব ধরে ৩৫ মিলিয়ন টন কয়লা বাবদ ব্যয় হিসাব করলে ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশে জ্বালানি তেল আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে পেট্রোবাংলা। কিন্তু এককভাবে কোন কোম্পানিকে দিয়ে কয়লা আমদানির বিষয়ে আলোচনা হলেও এত দিনে কোন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।
নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিজিসিএল)- এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুদ্দিন আহসান দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সঙ্কটের সমাধানে একক কোন কোম্পানির মাধ্যমে কয়লা আমদানির সুপারিশ করে। বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত এক সেমিনারে বছর দুই আগে এ সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। যেখানে একক কোন কোম্পানির মাধ্যমে কয়লা আমদানির ব্যবস্থা করার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন আহসান বলেন, একক কোন কোম্পানি গঠন করা হলে কয়লা আমদানিতে নানা সুবিধা সৃষ্টি হতে পারে। প্রত্যেকের জন্য কমন কিছু ব্যয় রয়েছে। যেগুলো আর তখন পৃথক পৃথকভাবে করা লাগবে না। যারা কয়লা আমদানি করবে তারা বিশেষভাবে দক্ষ হয়ে উঠবে যাতে তারা বিষয়টি নিয়ে সঠিক দর কষাকষি করতে পারবে। এছাড়া বেশি পরিমাণে কয়লা কিনলে রফতানিকারকের কাছ থেকে বড় রকমের ছাড় পাওয়া যাবে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি এবং মাপজোখ করার জন্য নানা রকম যন্ত্রাংশ দরকার হয়। সেগুলো তখন একজনই ব্যয় করবে। কোন কারণে দেশের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লা ব্যবহার না করতে পারলে ওই কয়লা অন্য কেন্দ্র নিতে পারবে এতে ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে। আর এককভাবে কেন্দ্রগুলো আলাদা আলাদা চুক্তি করলে সাধারণত কম কয়লা কিনবে। তিনি বলেন, বেশি পরিমাণ কয়লা কিনলে রফতানিকারক বিশেষ ছাড়ও দিতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি বেসরকারী উদ্যোক্তাদের একটি পক্ষ সরকারের কাছে কয়লা আমদানির জন্য নিজেদের আগ্রহের কথা জানায়। এদের কারোরই কয়লা ভিত্তিক কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই। এছাড়া কয়লা আমদানি রফতানির কোন অভিজ্ঞতাও নেই। উদ্যোক্তাদের মধ্যে দেশের তিনটি কোম্পানি রয়েছে যাদের দুটির বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে একটি কোম্পানির তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সংক্রান্ত ব্যবসা রয়েছে। অন্য কোম্পানিটি একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পেয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, সরকার ১০ হাজার মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। যার অর্ধেকের বেশি মালিকানা থাকছে সরকারের হাতে। এসব কেন্দ্রের কয়লা আমদানির দায়িত্ব সরকারের বদলে বেসরকারী কারও হাতে ছেড়ে দেয়া সমীচীন হবে না। আর একবার বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিলে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বিষয়টি। এছাড়া সরকার যেসব কেন্দ্র নির্মাণ করছে তার বেশিরভাগই যৌথ উদ্যোগে অন্য কোন দেশের সঙ্গে তাদের বিনিয়োগে নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে সরকার যদি জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় বিনিয়োগেকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। যা সুফল বয়ে আনবে না।
সৌজন্যে: জনকন্ঠ
Be the first to comment