করোনা ভাইরাস: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চীনা শ্রমিকদের দেশের বাইরে যেতে মানা

করোনা ভাইরাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা ভাইরাস উদ্বেগে পদ্মা সেতুর চীনা শ্রমিকদের জন্য স্থিতি অবস্থা জারি করেছে সেতু বিভাগ। অর্থাৎ কোনও শ্রমিক বাংলাদেশ ছাড়তে পারবে না আবার যারা চীনে রয়েছেন তাদেরও আপাতত ফিরতে মানা করা হয়েছে। একইভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল সংখ্যক চীনা শ্রমিক কর্মরতে আছে। তাদের আপাতত দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, আমরা মৌখিকভাবে চীন শ্রমিকদের চীন যেতে মানা করে দিয়েছি। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারাও যেতে আগ্রহী নয়।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাস চীনে ছড়িয়ে পড়ায় সচেতনতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে চীনে নববর্ষের ছুটি চলছে। এ ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত প্রচুর চীনা শ্রমিক ও কর্মকর্তা নিজেদের দেশে ফিরে গেছেন। আগামী মাসের প্রথমার্ধে এই ছুটি শেষ হবে। তখন চীন থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী একসঙ্গে বাংলাদেশে আসার কথা।

সূত্র জানায়, দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা নির্মাণ করছেন দুই হাজার ৭০০ চীনা নাগরিক। নিয়মিতই তারা চীনে যাতায়াত করেন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকাতে। এছাড়াও দেশের আরও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়ে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনায় চীনা শ্রমিকের সংখ্যা কম নয়। শুধু কেন্দ্র নির্মাণই নয় বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি এবং সঞ্চালন কোম্পানিতে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করছেন। ফলে বিশাল সংখ্যক এসব চীনা নাগরিকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়াও দেশের জ্বালানিখাতে বড়পুকুরিয়ার কয়লা উত্তোলন এবং মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে কাজ করছেন চীনা নাগরিকরা। বিদ্যুৎখাতের সবচেয়ে বেশি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত আছেন চীনা শ্রমিকরা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাইরেও সরকারি-বেসরকারি আরও কিছু প্রকল্পে দেশটির শ্রমিকরা কর্মরত। ফলে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না দেওয়া হলে ও নজরদারি না থাকলে চীনা শ্রমিকদের কেউ ভাইরাসটির বাহক হয়ে যেতে পারেন। দেশি শ্রমিকদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করায় এবং বাংলাদেশ সর্দি-কাশির মতো অসুখের প্রকোপ অনেক বেশি হওয়ায় এর পরিণতি অনেক মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর বিমানবন্দরে চীন থেকে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। তবে যেহেতু ভাইরাসটি ১৪ দিন পরেও মানুষের শরীরে তার অস্তিত্ব জানান দিতে পারে তাই এরপরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা ভাইরাস বিষয়ে সতর্ক থাকার বিষয়ে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি চীনা নাগরিক কাজ করেন। আমাদের এখানে তাই সতর্কতাও বেশি নিতে হচ্ছে। এখন নববর্ষের ছুটি থাকায় অনেক চীনা শ্রমিক এখন চীনে অবস্থান করছেন। তারা ছুটি শেষে ফিরতে শুরু করবেন। তাই তাদের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু করোনা ভাইরাসটি মানুষের শরীরে ১৪দিন পযন্ত অবস্থান করতে পারে। তাই কোনও চীনা শ্রমিক যদি আমাদের এখানে এখন আসে তাহলে তাকে আমরা ১৪দিন আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি এখন যারা বিদ্যুৎকেন্দ্র কাজ করছে, দেশি-বিদেশি সবার ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে বক্সে করে আমরা মুখের মাস্ক, হ্যাণ্ড গ্লাভস নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাচ্ছি। পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আলাদা করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

প্রায় একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রায় ৩০০ চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এদের মধ্যে এখন কাউকে চীন যেতে বা খুব প্রয়োজন না হলে চীন থেকে কারও আসার বিষয়ে আমরা মৌখিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। তিনি বলেন, এছাড়া মুখে মাস্ক ব্যবহার করাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.