নিজস্ব প্রতিবেদক :
এক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে, গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখনো সক্ষমতার ৪০ শতাংশের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায় ও অদক্ষতার ওপরেও গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের ওপর যে রাজস্ব চাপ রয়েছে তা কমিয়ে অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অসংগতি বন্ধের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ খাত : ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগসমূহ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপটি সঞ্চালনা করেন।
সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়কালে (২০২১-২৫) বিদ্যুৎ খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অতিক্রম করবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অভিজ্ঞতার আলোকে, সেই সঙ্গে কভিড-পরবর্তী বাস্তবতার নিরিখে বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনাগুলো সাজানো প্রয়োজন। দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখনো ৪০ শতাংশের কম দক্ষতা মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। অদক্ষতার বিষয়ে নজর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি মিশ্রণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।
পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য বিদ্যুৎ খাতের লক্ষ্য এবং কৌশল হিসেবে সিপিডি কিছু সুপারিশমালা উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের যে চাহিদা তার একটি যৌক্তিক প্রক্ষেপণ প্রয়োজন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বালানি মিশ্রণের জন্য অদক্ষ ও তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করা এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন মনিটরিংয়ের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারকে (এনএলডিসি) গড়ে তোলা উচিত। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) কার্যক্রমে আরো গতি বৃদ্ধি প্রয়োজন।
সিপিডি আরো সুপারিশ করে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন (দায়মুক্তি আইন) থেকে বের হয়ে আসার চিন্তা করতে হবে। যে রাজস্ব চাপ রয়েছে সরকারের ওপর, তা কমিয়ে আনতে হবে। বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায় ও অদক্ষতার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
স্রেডার চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা মাথায় রেখে জ্বালানি মিশ্রণে এখনই পুরোপুরি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করা সম্ভব নয়। তবে ছাদের ওপর সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌরশক্তির ব্যবহার নিয়ে সরকার ব্যাপকভাবে কাজ করছে। জল বিদ্যুৎ আমদানি নিয়েও পরিকল্পনা চলছে। বায়ু বিদ্যুৎ একটি বিকল্প উৎস হতে পারে, তাই সেটি নিয়ে আরো গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মূল্যবৃদ্ধি, অদক্ষতা ও আর্থিক দায় মোকাবেলা করতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ ছাড়া সংলাপে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম, বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম এবং সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ।
Be the first to comment