নিজস্ব প্রতিবেদক :
গ্যাসের কারণে কমদামে বিদ্যুৎ পেয়ে এসেছি। গ্যাস ফুরিয়ে আসার কয়লা আমাদের সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে পারতো। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে দেশীয় কয়লা থেকে সরে থাকা নীতি আত্মঘাতি হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন জরুরি।
আজ শনিবার এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকা আয়োজিত ২০২১ সালের এনার্জি চ্যালেঞ্জ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে এমন মতামত উঠে এসেছে।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যদিয়েও আমাদের অর্জন অনেক ভালো। ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এক বছর হাতে থাকতেই গ্রিড এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে এবং সাড়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্যাপাসিটি অর্জন করেছি। আমরা এখন নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আগে সাইফি-সাইদি ছিল বিতরণ কম্পানি নির্ভর। এখন স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে ডাটা জেনারেট করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। চলতি বছরেই ৫০ শতাংশ অটোমেশন হবে। সবাই কোয়ালিটি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে, গ্রিড বিদ্যুতে শিল্পের আস্থা ফিরবে। আমরা ডাবল সোর্স নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, যদিও আমরা ভারতেও হোলসেল মার্কেট থেকে অংশ নিতে পারি। তাহলে কমদামে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। আমাদের মাত্র দুটি লাইন। অবকাঠামো উন্নয়ন করলে এটি করা সম্ভব। ভারতে সোলার ৩ টাকা ইউনিটে বিক্রি হচ্ছে। এটি কস্ট নয়, ওরা অতিরিক্ত উৎপাদন তাই মার্কেট খুঁজছে। ভারতের সঙ্গে কমপক্ষে আরো দুই-তিনটি পয়েন্ট বাড়ানো উচিত। পায়রা হাব, মাতারবাড়ি হাব হচ্ছে অটোমেডেট সঞ্চালন সিস্টেম হতে হবে। পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসলেও নিতে পারব না। একটি পয়েন্ট থেকে ১০ শতাংশের বেশি নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, শিল্পে বিদ্যুতে ব্যবহার বাড়াতে হবে। গত তিন-চার বছর একই অবস্থায় রয়েছে। শিল্পের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ডিমান্ড ফোরকাস্ট করার দায়িত্ব পাওয়ার সেলকে নিতে হবে। মাইক্রো লেভেল থেকে খাতভিত্তিক চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। আমি যদি ৫ বছরের পেডিক্ট করতে না পারি, তাহলে সবই ভুল। প্লানিং ১০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, ২০ বছরের প্লানিং ইউজলেস।
পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক প্রকেৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, গ্যাস উত্তোলনে অনেক পিছিয়ে, কারণ সিদ্ধান্তহীনতা। লো-প্রাইস এবং মাল্ট্রিক্লেইন সার্ভের অভাবে অফসোরে বেশিগুলো অগ্রসর হতে পারিনি। হাইপ্রেসার জোনে বাপেক্স যেখানে পারছে না সেখানে পিএসসির মাধ্যমে করা যেতে পারে। কয়লাকে বাদ দিলে চলবে না। এটি এখনও সাশ্রয়ী এনার্জি। তবে এটির মিক্স কতো হবে। নিজস্ব কয়লা ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমদানি নির্ভরতা একটি প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ যদি রপ্তানি ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমদানি নির্ভরতা বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারবে না। রপ্তানি ধরে রাখতে পারলে আমরা মোকাবেলা করতে পারব।
বিপ্পার প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম বলেন, আমাদের ১৫-১৭শ মেগাওয়াট রয়েছে অনেক পুরনো বর্তমানে যুগের বিবেচনায় প্রকৃত পক্ষে এগুলো আর চলে না। ক্যাপটিভ ও অন্যান্য বাদ দিলে প্রকৃত পক্ষে ১৫ হাজার মেগাওয়াট দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন সময় পেপার পত্রিকায় সমালোচনা করা হয়, বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিয়েছে কিনা। আমি মনে করি সঠিক এবং যথাযথ রয়েছে। সঞ্চালন ও বিতরণেও প্রাইভেটাইজেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সঞ্চালনের পলিসিতে বিতরণও যুক্ত হতে পারে। ভবিষ্যতে ফুয়েল মিক্সে সরকার গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানির দিকে যেতে চাচ্ছে এটি ভালোই হবে।
অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় আরএমআইটির অধ্যাপক ড. ফিরোজ আলম বলেন, আমাদের যে ১০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি। যেকোনো প্রেক্ষাপটে এটি ভালো বলতে হবে। আমাদের আবাসিকে ৫৭ শতাংশ এবং শিল্পে মাত্র ২৮ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতে শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে ৪১ শতাংশ। এই ব্যবহার বাড়ানো উচিত। শিল্পে কিভাবে ব্যবহার বাড়ানো যায়, এটি দেখতে হবে। আবাসিকে কিভাবে সাশ্রয়ী হওয়া যায়, সেটি ভেবে দেখা দরকার। ভেন্টিলেশনের দিকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী। কয়লা ২৫ শতাংশের নিচে যেন না নামে। যদি কয়লা বাদ দিয়ে শুধু অন্যান্য এনার্জি নির্ভর হই তাহলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
Be the first to comment