নিজস্ব প্রতিবেদক :
১৫ দিনের মধ্যে ইজিবাইকের নীতিমালা তৈরি করবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (ইপিআরসি)।
নীতিমালা প্রণয়নে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সম্পৃক্ত করা হবে। নীতিমালায় ইজিবাইকের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষে কে হবেন তা নির্দিষ্ট করা হবে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী সকল প্রকার যান্ত্রিক যানবাহনের নিবন্ধন এবং বাৎসরিক ফিটনেস দিয়ে থাকে বিআরটিএ। কিন্তু ইজিবাইকের ক্ষেত্রে এ সবের কোনো বালাই নেই। অনিবন্ধিতভাবে দেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে ইজিবাইক চলাচল করছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুঘটনা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ মাচ) ইজিবাইক নিয়ে অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে ইপিআরসির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, নিবন্ধন বিকেন্দ্রীকরণ কর দরকার। সব কিছুই বিআরটিএ কে করতে হবে তা নয়। স্থানীয় সরকারও কিছু কিছু কাজ করতে পারে। আগামী পনেরো দিনের মধ্যে ইজিবাইকের নীতিমালা তৈরি করতে পারলে নিবন্ধনের কাজও দ্রুত শুরু করা যাবে।
তিনি বলেন, ইজিবাইকের স্ট্যান্ডার্ড কিভাবে নিধারণ করবো তা নীতিমালায় থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজন জরিপ কথা আসছেম জরিপের কাজ বাংলাদেশ বুর্যো অফ স্টেটিসস্টিককে দেয়া গেলে ভাল হয়। তিনি বলেন, এই যানটি মহাসড়কে বন্ধ করে শুধু উপজেলা বা অলিগলিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে দুঘটনা এড়ানো সম্ভব। স্লো মুভিং ভেহিকল সব জায়গায় যায় না। মহাসড়কের দুঘটনায় কমাতে স্পিডের উপর ভিত্তি করে যদি রেগুলেশন করা হয় সেটা আমি সমথন করি। স্থানীয় সরকার থেকে এই নিবন্ধন দেয়া গেলে ভাল হয়।
ইপিআরসি এর চেয়ারম্যান জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমরা ১৫ দিনের মধ্যেই ইজিবাইকের নীতিমালাটি চূড়ান্ত করবো। নীতিমালা চুড়ান্ত করা গেলে নিবন্ধনের কাজও দ্রুত হবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সবার মতামত নেয়া শুরু করেছি।
বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ইজিবাইক অফিসিয়ালি অনুমোদিত নয়। কিন্তু এর ব্যবহার এখন ব্যাপক। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। তাই একে নিয়ন্ত্রণের জন্য, কোথায় চলবে, মান নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ জরুরি ছিল।নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে পরিবেশেরও খুব উপকার হবে। শুধু গ্রামে নয়, শহরেও আজকাল এই ধরনের যান দেখা যায় অলিগলিতে।
বিআরটিএ এর পরিচালক ( ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ইজিবাইকের যে মডেল আছে সেগুলা অনেক পুরানো। নকশাও পুরানো। এগুলার মান কিভাবে উন্নত করা যায়। পরিবেশবান্ধব বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। সেটা সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া খুব জরুরি।
হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি বেগম আতিকা ইসলাম বলেন, মহাসড়কের নিরাপত্তা চিন্তা করতে হবে আমাদের। গত দুইমাসে ৬২টি দুঘটনা ঘটেছে। এতে ৫০ জন মারা গেছে। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় কি পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে। মহাসড়কে আমরা সতর্ক থাকি। ব্যাটারি জব্দ করা হচ্ছে, অভিযান চলছে। নীতিমালার মাধ্যমে এই যানগুলো মডারেট করা জরুরি।
এলজিইডির অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, ইজি বাইকের মান ঠিক না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইসেন্স নেয় না নেয় ঠিক নেই। মান নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ি কিনা তাও বিবেচনা করা দরকার। লাইসেন্সের আওতায় আনা দরকার। জেলা থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পযন্ত আর কোনো যান আসলেই নেই। সড়ক মহাসড়কে এই ইজিবাইক চলছে। ব্যবহার উপযোগী করা। আরামপ্রদ করা। আইনগত সাপোর্ট করা জরুরি, যাতে জনগণের উপকার হয়।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের মোটরযান পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, নীতিমালায় মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোন কোন সড়কে চলবে সেটি নির্ধারন করে দেয়া দরকার। বি আর টি এ এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ভাল হয়।
নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আরো আগে উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল। ১৫ থেকে ২০ লাখ ইজিবাইক চলছে এখন। আমাদের আসলে নির্ধারন করা দরকার কত ইজিবাইক আসলে চলতে পারে। মানের পাশাপাশি ড্রাইভারদের ট্রেনিং দেয়া জরুরি। নষ্ট হবার পর ব্যটারি পরিবেশের ক্ষতি করছে। যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া হয়। এই ব্যাটারি সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা উচিত। যারা ব্যাটারি বিক্রি করছে তারাই পুরানো ব্যাটারি ফেতর নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।
ইপিআরসি এর ডেপুটি ডিরেক্টর ইব্রাহিম আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন, বিবিএস পরিচালক সিএস রায়, ভলভো ব্যাটারির এস এম শামসুল আলম, এটলাস বাংলাদেশ খন্দকার জহিরুল হকসহ আরো অনেকে।
Be the first to comment