টেক্সটাইল ও গার্মেন্টে ৪১ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিল্পে খাতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের মধ্যে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সেক্টরে ৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ খাতে সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা গেলে বিদ্যুতের ব্যবহার ১৭.৬ শতাংশে নেমে আনা সম্ভব। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুপ্রেরণা দেওয়া জরুরি।

শনিবার (২৭ মার্চ) এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত, ‘গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সেক্টরে এনার্জি সাশ্রয়ের সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে। সেমিনার সঞ্চালনা করেন- এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, শিল্পের কাছে বেশি বেশি শুনতে হবে তারা কি চায়। বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে, তাদের কাছে যেতে হবে, তাদের সমস্যাটা বুঝতে হবে। কিভাবে সংখ্যা বাড়ানো যায় এনার্জি অডিটিং। যারা অডিটিং করবে সাটিফিকেশন দিবে তাদের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। ব্যাংক ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউট ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন করতে হবে। অনেক সময় ঋণের জন্য ঘুরতে হয়। অল্প টাকার জন্য এতো দৌড়াদৌড়ি করতে চায় না। যেনো তারা হতাশ না হয়।

উপদেষ্টা বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে স্বপ্ন নগরের মতো জিরো ওয়েস্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে। স্বপ্ন নগর দেখে আসতে পারেন। সেখানে হিউম্যান বর্জ্যকে ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে গার্মেন্ট শিল্পও লাভবান হতে পারেন।

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, প্রত্যেকটা ভালো কাজের জন্য ইনসেনটিভ দরকার। ইনসেনটিভ বলতে শুধু আর্থিক তানা, অনুপ্রেরণার জায়গাটা নিশ্চিত করা দরকার। বাংলাদেশে ১৩৩টির মতো গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে, ৫’শ টির মতো লিড সাটিফাইড প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বিশ্বের ১০টি গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে বাংলাদেশেই ৭টি অবস্থিত। এই শিল্পে ৪১ লাখ লোক কাজ করছে। আমাদের কিছু ভুল হতেই পারে। শুধু যদি গালিগালাজ শুনি তাহলে খারাপ লাগে। অডিটিংটা শুনতে কেমন লাগে, মনিটরিং নামকরণ হতে পারে। আমাদের টেকসই শিল্পের স্লোগান অনেক আগে উঠেছে। আক্ষরিত অর্থে কাজটি অনেক দেরিতে কাজ শুরু করেছি। সবুজ বিপ্লব হতে হলে সমস্ত ফ্যাক্টরিকে নিয়ে করতে হবে।

স্রেডার চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, স্রেডার জন্মটাই প্রমাণ করে সরকার সাশ্রয়ী এনার্জির বিষয়ে কতটা আগ্রহী। ১২টি প্রতিষ্ঠানের এনার্জি অডিট করেছি। এটি সত্য কথা অনেক সময় পাবলিস ডকুমেন্ট থাকে না। আমরা বই আকারে বের করবো। এনডিসিতে কার্বন ইমিশন কমানোর কমিটমেন্ট করেছি, এসব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ীর বিকল্প নেই।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. নুরুল ইসলাম বলেন, কেস স্ট্যাডিগুলো লিপিবন্ধ করে পৌঁছে দেওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ফাইন্যান্সিং প্রকল্প নেওয়া হয়। এতোদিন কতোজনকে দিয়েছেন, কি কাজে দেওয়া হয়েছে, ফল কি হয়েছে., মনিটরিংটা করা হয়নি। এটি তুলে ধরা দরকার।

বুয়েট মেকানিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জহুরুল হক বলেন, পে-ব্যাক ৩ বছর থেকে ৫ বছরে। তাহলে তো নিজেরাই বিনিয়োগ করার কথা। এখন সময় এসেছে পাইলট প্রকল্প আকারে তুলে ধরা। সেখানে দেখাতে হবে, কতো বিনিয়োগ, কিভাবে সাশ্রয় হচ্ছে, এখন কত মুনাফা হচ্ছে। প্রথম যে সাটিফিকেশন পরীক্ষা হয়েছে বুয়েট স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে। ১৫০ জন পরীক্ষা দিয়ে মাত্র পাস করেছে ১ জন, কেনো। আমাদের কোয়ালিটি অডিটর না থাকে তাহলে কে নিশ্চিত করবে। পরীক্ষার্থীরা বলেছে, আমরা মেশিন চালাই এখন ক্যালকুলেট করতে ভুলে গেছি।

বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, অর্থায়নের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ব কমাতে হবে। সেই দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন রয়েছে। উদ্দেশ্য ভালো, সবার মনেই এনার্জি সেভিং থাকা উচিত।

স্রেডার সদস্য (ইইএন্ডসি) ফারজানা মমতাজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ শিল্পে, আবাসিকে ৩২ শতাংশ এবং ট্রান্সপোর্ট খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ১১ শতাংশ। শিল্পে ব্যবহৃত মোট বিদ্যুতের মধ্যে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সেক্টরে ৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে যদি সাশ্রয় নিশ্চিত করা যায় তাহলে ১৭.৬ ভাগে নেমে আসবে বিদ্যুতের ব্যবহার। এ খাতে ৪১.৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানোর সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, স্রেডা কাজ করছ। তবে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ডাটাগুলো সেভাবে পাচ্ছি না। টেস্টিং ফ্যাসিলিটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সাটিফায়েড এনার্জি অডিটরের ঘাটতি রয়ে গেছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.