নিউজ ডেস্ক :
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়াক্টর প্লান্ট আসছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটমের অধীন কোম্পানি
জেএসসি এইএম টেকনোলজি এই রিয়াক্টর পাঠাচ্ছে। এই কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের ভিভিইআর ১২০০ চুল্লির জন্যে চুল্লি পাত্র এবং প্রথম দুইটি স্টীম জেনারেটরও আসবে।
রোসাটমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিয়াক্টর ও ষ্টীম জেনারেটর প্রত্যেক্টির ওজন ৩৪০ টন ও এদের দৈর্ঘে যথাক্রমে ১২ মিটার ও ১৪ মিটার । এগুলোকে প্রথমে প্লান্টের বিশেষ বার্থে নেয়া হবে এবং সেখান থেকে যন্ত্রাংশগুলোকে জাহাজে করে জলপথে রাশিয়ার নভোরোসিস্কে নেয়া হবে । সেখান থেকে এগুলো ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে ।
বলা হয়, রিয়াক্টরটি নির্মান প্রক্রিয়ায় ৭৬৮টি অপারেশন এবং ১৪৩ টি কন্ট্রোলিং পয়েন্ট সহ এটিকে নির্মান করতে মোট সময় লাগে ২ বছর । এই প্লান্টের বিশেষজ্ঞরা উপরের ইউনিটের স্ট্যান্ডার্ড কভার যুক্ত হাইড্রলিক টেস্ট সহ চুল্লি পাত্রটির সকল ধরনের সকল ধরনের পরীক্ষা করেন । এই পরীক্ষা চলার সময় চুল্লিটির অভ্যন্তরে ২৪.৫ এমপিএ চাপ সৃষ্টি করা হয় যা অপারেটিং চাপের চেয়েও ১.৪ গুন বেশী ।
এছাড়া যন্ত্রাংশ প্রস্তুতির শেষ ধাপ হলো অভ্যন্তরীন যন্ত্রাংশের পরীক্ষামুলক ভাবে সাজানো । নকশা অনুযায়ী কোর ব্যারেল , কোর বাফেল এবং প্রতিরক্ষামুলক টিউব ইউনিটকে চুল্লি পাত্রের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয় । বাংলাদেশের প্রতিনিধিসহ এই প্লান্টের বিশেষজ্ঞরা যন্ত্রাংশের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন । এর মাধ্যমে প্রস্তুত করা এই যন্ত্রাংশের জ্যামিতিক পরিমাপ, নকশা অনুযায়ী সারি এবং গুনগত মান নিশ্চিত করা হয় ।
জেএসসি এইএম টেকনোলোজির ডিরেক্টর জেনারেল ইগোর কটভ বলেন “ রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের মুল যন্ত্রাংশগুলো ঠিক সময়মত পাঠানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত, এটি এই আয়তনের শেষ চালান । এটি পারমানবিক শিল্পে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ এবং আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই সহযোগীতা সব সময় বজায় থাকবে।
রিয়াক্টর প্লান্ট প্রস্তুতি অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তির একটি কাজ যার দক্ষতা বিশ্বে গুটিকয়েক দেশের আছে । প্রসঙ্গত, জেএসসি এইম টেকনোলোজি রাশিয়ার একমাত্র কোম্পানী যা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ষ্টীম জেনারেটিং প্লান্টের সম্পুর্ন অংশ তৈরি করে । এটোমম্যাস বছরে সর্বোচ্চ ৪ সেট যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে পারে । বাংলাদেশের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ টি ইউনিটের জন্যে জেএসসি এইম টেকনোলোজি প্রায় ৫০ ধরনের যন্ত্র প্রস্তুত করেছে , যা মধ্যে রয়েছে প্রেসার ভেসেল, আপার ইউনিট, কোর ব্যাফেল, কোর ব্যারেল, প্রটেক্তিভ টিউব ইউনিট , ষ্টীম জেনারেটরের একাধিক ইউনিট, রিয়াক্টর কুল্যান্ট পাইপলাইন, রিয়াক্টর কুল্যান্ট পাম্প এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ । সর্বমোট , ৪০০০ টন ওজনের যন্ত্রাংশ পাঠানো হবে ।
রিয়াক্টর লম্বা সিলিন্ডার আকৃতির গোলাকার তল বিশিষ্ট, এর অভ্যন্তরে কোর এবং ইন্টার্নাল যন্ত্র থাকে। ড্রাইভ মেকানিজমের সাহায্যে রিয়াক্টরটি কভার দ্বারা সম্পূর্ন অভেদ্যভাবে আটকানো থাকে, রিয়াক্টরের নিয়ন্ত্রন ও নিরাপত্তা রড গুলো এর মধ্যে স্থাপন করা হয় , এবং নজেলের সাহায্যে তারগুলোকে ইন-কোর ইন্সট্রুমেন্টেশন নেয়া হয় । কভার কে ভেসেলের সাথে স্টাডের সাহায্যে লাগানো হয় । ভেসেলের উপরের অংশে কুল্যান্টকে জরুরী মুহুর্তসহ প্রতিনিয়ত সরবরাহ ও অপসারন করার জন্যে নজেল থাকে ।
রাশিয়ান প্রকল্প অনুযায়ী রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নকশা ও নির্মান হচ্ছে । এর নকশা ও বাস্তবায়ন করছে রোসাটম রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ । এই কেন্দ্রে মোট ২টি ইউনিটের প্রত্যেক্টিতে ভিভিইআর ১২০০ রিয়াক্টর থাকছে, যার কর্মক্ষমতা থাকে ৬০ বছর এবং আরও ২০ বছর বাড়ানো যায় ।
Be the first to comment