বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১৩ দশমিক ৫ ভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ্বালানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেল মজুদাগার ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর এই ঘোষণা দেন।

তার প্রস্তাবে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য এবার ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

গেল ২০২০-২১ অর্থছরের মূল বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার৭৫৮ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধনে ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকায় নেমে আসে। সেই হিসাবে সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এবার বরাদ্দ বাড়ছে ১৫.৫ শতাংশের মত।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় জানান, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ১৪ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে নির্মাণাধীন। ২ হাজার ৯৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

পাশাপাশি ৬২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন; পরিকল্পনায় রয়েছে ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সরকারের ‘দূরদর্শী ও সময়োপযোগী’ পদক্ষেপের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গত ১২ বছরে ‘অভূতপূর্ব সাফল্য’ অর্জিত হয়েছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে ৫ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

তিনি জানান, মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) এখন ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, যা দিয়ে দেশের মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে এখন ৭২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে মহানগর এলাকার সব বিতরণ লাইন ও সাবস্টেশন ভূগর্ভস্থ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৬ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”

অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে আবিষ্কৃত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি উৎপাদন আছে এবং ২০০৯ সালের পর প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে প্রায় দুই হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

গ্যাসের চাহিদা মেটাতে মহেশখালীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে মোট এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ ঘনফুট আমদানি করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কক্সবাজারের মাতারবাড়িত দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার ল্যান্ড-বেইজ এলনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানো ও সুসংহত করতে জ্বালানি তেলের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.