নিউ জিল্যান্ডের স্পিনে মুখ থুবড়ে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং

ক্রীড়া প্রতিবেদক:

নিউ জিল্যান্ডের জন্য স্পিন মঞ্চ বানিয়ে সেখানে মুখ থুবড়ে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিংই। বিশ্বকাপ দলের একজনকেও না নিয়ে সফরে আসা নিউ জিল্যান্ড দারুণ এক জয়ে জিইয়ে রাখল সিরিজের উত্তেজনা।

প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫২ রানে হারিয়ে দিল নিউ জিল্যান্ড।

টি-টোয়েন্টিতে ৫২ রানের জয় মানে যে কোনো প্রেক্ষাপটেই বড় ব্যবধানের জয়। সেখানে ১২৮ রানের পুঁজি নিয়ে এই জয় মানে ব্যবধানটা আসলে আরও অনেক বড়।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ১২৯ রান তাড়ায় বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৭৬ রানেই।

টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর এটি। ৭০, ৭৬, ৭৬, ৭৮-এই সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন চারটি স্কোরই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে।

নিউ জিল্যান্ডের অনভিজ্ঞ তিন স্পিনার মিলে ধসিয়ে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা এজাজ প্যাটেল। আন্তর্জাতিক তো বটেই, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি মিলিয়েও প্রথমবার ৪ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

অফ স্পিনার কোল ম্যাকনকির ১৫ রানে ৩ উইকেট। তারও এটি সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৪ ওভারে কেবল ১৩ রান দিয়ে ১ উইকেট আরেক স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রর।

উইকেট যথারীতি ছিল মন্থর। তবে ৭৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার মতো নয় মোটেও। এ দিন বরং গ্রিপ ও টার্ন ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা যখন প্রতিযোগিতায় নামে কে কার চেয়ে বাজে শট খেলতে পারে, সেই দলের তো এমন পরিণতিই হওয়ার কথা!
১২৯ রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল ঝুঁকিহীন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দেখে মনে হলো, লক্ষ্য বুঝি ১৭০-১৮০!

অথচ ইনিংসের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। জ্যাকব ডাফির করা প্রথম ওভারে মোহাম্মদ নাঈম শেখের ব্যাটে দুটি বাউন্ডারি আসে দারুণ শটে। লিটন দাস তিনটি বাউন্ডারি পেয়ে যান দ্রুতই। এজাজকে কাট শটে, কোল ম্যাকনকিকে পরপর দুই বলে হাঁটু গেঁড়ে।

এরপরই লিটন হারান মনোযোগ। ম্যাকনকির যে শর্ট বল পুল করা যেত অনায়াসেই, সেটিই আবার হাঁটু গেঁড়ে মারতে গিয়ে তিনি এলবিডব্লিউ।

বাংলাদেশের দুর্দশার সেটিই শুরু। দ্রুত রান তোলার জন্য তিনে নামানো হয় মেহেদি হাসানকে। এজাজের বল আলতো করে তিনি তুলে দেন শর্ট মিড উইকেটে।

ম্যাচের সবচেয়ে বাজে শটটি খেলেন হয়তো সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় বলেই ডাউন দা উইকেট খেলে উড়িয়ে মেরে ধরা পড়েন লং অনে। টি-টোয়েন্টিতে ষষ্ঠবার আউট হলেন তিনি শূন্যতে।

১ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট।

ততক্ষণে থিতু হয়ে যাওয়ার কথা নাঈমের। কিন্তু দলকে আরও একবার আশাহত করে তিনি রবীন্দ্রর বাইরে বল টেনে আনেন স্টাম্পে (১৯ বলে ১৩)।

নিজের শততম ম্যাচে দলের বিপর্যয়ে ভরসা হতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। এজাজকে জায়গা বানিয়ে ইনসাইড আউট খেলতে গিয়ে অধিনায়ক ধরা পড়েন কাভারে। আফিফ হোসেন উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই খেলেন ব্যাখ্যাতীত শট। ফুল লেংথ বল থার্ডম্যানে খেলতে গিয়ে বোল্ড।

৪৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে তখনই অনেকটা ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।

অল্পের জন্য রান আউট থেকে বেঁচে যাওয়ার পর নুরুল হাসান সোহান বিদায় নিলেন ছক্কা মারার চেষ্টায়। সাইফ উদ্দিনও পারলেন না নিজের অলরাউন্ডার পরিচয়ের প্রতি সুবিচার করতে।

মুশফিক তখনও টিকে। তবে ইনিংসজুড়েই তিনি ভুগলেন টাইমিং করতে।
চতুর্থ ওভারে উইকেটে গিয়ে মুশফিক টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। তবে কেবলই নিজের ছায়া হয়ে। ছন্দ পাননি একটুও। টাইমিং পেতেই ভোগেন বারবার। কোনো বাউন্ডারি ছাড়া তার ৩৭ বলে ২০ রানের অপরাজিত ইনিংস কোনো কাজে আসেনি দলের।

এই উইকেটে কেমন খেলা উচিত, সেটি ম্যাচের প্রথম ভাগে দেখান হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। ৬২ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধার করেন তারা দারুণ জুটিতে।

ম্যাচের শুরুতে ঝড় তোলার আশা জাগান কোভিড নেগেটিভ হয়ে একাদশে ফেরা ফিন অ্যালেন। তবে মুস্তাফিজুর রহমানের কাটার তাকে টিকতে দেয়নি বেশিক্ষণ (১০ বলে ১৫)।

রবীন্দ্র ও উইল ইয়াংও শুরুটা ভালো করে পরে পারেননি ধরে রাখতে। ২০ বলে ২০ করে ফেরেন দুজনই।

অভিজ্ঞ কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও আগের ম্যাচে ফিফটি করা টম ল্যাথাম যখন ফিরলেন অল্পতে, নিউ জিল্যান্ড তখন বড় বিপাকে।

সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেন নিকোলস ও ব্লান্ডেল। এক-দুই করে রান নিয়ে তারা খেলা টেনে নেন শেষ দিকে। অপেক্ষা করতে থাকেন উপযুক্ত সময়ের। শেষ তিন ওভারে ৫ বাউন্ডারিতে তারা রান তোলেন ৩৩।

নিকোলস অপরাজিত থাকেন ২৯ বলে ৩৬ রানে, ব্লান্ডেল ৩০ বলে ৩০। দুজনের জুটি ৫৫ বলে ৬৬ রানের।

ম্যাচ জয়ের ভিত গড়া হয়ে যায় ওই জুটিতেই। পরের কাজ সারেন তাদের তিন স্পিনার। উড়তে থাকা বাংলাদেশের পতন বাস্তবতার জমিনে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১২৮/৫ (অ্যালেন ১৫, রবীন্দ্র ২০, ইয়াং ২০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, ল্যাথাম ৫, নিকোলস ৩৬*, ব্লান্ডেল ৩০*; মেহেদি ৪-০-২৭-১, নাসুম ২-০-১০, মুস্তাফিজ ৪-১-২৯-১, সাকিব ৪-০-২৪-০, সাইফ ৪-০-২৮-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১০-১)।

বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ৭৬ (নাঈম ১৩, লিটন ১৫, মেহেদি ১, সাকিব ০, মুশফিক ২০*, , মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ০, সোহান ৮, সাইফ ৮, নাসুম ১, মুস্তাফিজ ; ডাফি ৪-০-১৪-০, এজাজ ৪-০-১৬-৪, ম্যাকনকি ৪-০-১৫-৩, রবীন্দ্র ৪-০-১৩-১, কুগেলাইন ৩-০-১৪-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ০.৪-০-২-১)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৫২ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: এজাজ প্যাটেল

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.