জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির

রশিদ মামুন:
জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। জুনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সব ধরনের জ্বালানির দর বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এই দরকে সর্বোচ্চ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, পরিশোধিত তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), কয়লা, তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বেড়েছে।

বিশ্বব্যাপি কোভিড-১৯ এর প্রভাবে গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দর ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থায় ছিল। চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হলে জ্বালানির চাহিদা বাড়তে থাকে। চাহিদা বৃদ্ধিকেই আপাতত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ব্লুমবার্গ বছরের শুরুতে ক্রড অয়েলের (অপরিশোধিত) দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার। মার্চে এসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ ডলারে। আর এপ্রিলে আবারও এক ডলার কমে তা ৬২ ডলার হয়। মে থেকে এই দর ৬৫ ডলারের উপরে উঠে যায়। এখন সেপ্টেম্বরে এসে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ ডলার। তবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পরিশোধিত জ্বালানির চেয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি বেশি কিনে থাকে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭৫ ডলার। গত মাসের শেষ দিকেও যা ছিল ৭২ ডলার।

স্পট মার্কেটে প্রতি প্রতি এমএমবিটিউ (প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজি বিক্রি হয়েছে ২১ ডলারে। গতমাসেই এই দাম ছিল ১৪ ডলার। তবে স্পট মার্কেট কখনওই এলএনজি বিক্রির ভিত্তি হতে পারে না। স্পট মার্কেটে এলএনজির সরবরাহের উপর দাম নির্ভর করে। হুট করে কোন কারণে চাহিদা বেড়ে গেলে এলএনজির দাম বেড়ে যায়। আবার কোন কারণে চাহিদা না থাকলে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কমে যায়।

একজন কর্মকর্তা জানান, এলএনজির স্টোরেজও (সংরক্ষণও) অনেকটা বিদ্যুতের মতো। বিশাল ব্যয়ে এই কারণে এলএনজি সংরক্ষণ করে রাখতে চায় না অনেকে। কোন কারণে দেখা গেলো ক্রয় আদেশ অনুযায়ি এক কার্গো এলএনজি কেউ প্রস্তুত করেছে কিন্তু ক্রয় আদেশটি বাতিল হয়ে গেল। তখন স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কমে যায়। আবার দেখা গেল একটি কার্গো কোন কোম্পানি রেডি করেছে তিনটি কার্গোর অর্ডার এল। তখন সরবরাহকারীরা এলএনজির দাম বাড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ গত বছর প্রতি এমএমবিটিউ এলএনজি ৩ ডলারে কিনেছে। আর এখন পর্যন্ত পেট্রোবাংলা সর্বোচ্চ ১৩ ডলারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি কিনেছে। এর আগে পেট্রোবাংলা প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩ দশমিক ৪২ ডলারে স্পট মার্কেট থেকে কেনার প্রস্তাব করে। তবে তখন সরকারের পক্ষ থেকে এত দামে এলএনজি না কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এখন আবার স্পট মার্কেট থেকে তিন কার্গো এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কত দাম পড়বে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এজন্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কোটেশন চেয়েছে পেট্রোবাংলা।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে আশঙ্কাজনকভাবে কয়লার দামও বাড়ছে। নিউক্যাসেল সূত্র বলছে, কয়লার দাম বছরের শুরুতেও ছিল টনপ্রতি ৯৩ ডলার। এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭ ডলারে। জুন থেকে ধারাবাহিকভাবে কয়লার দাম বাড়তে শুরু করেছে। জুনের শেষ দিকেও টন প্রতি কয়লার দর ছিল ১২৯ ডলার।

তবে নিউক্যাসেলের কয়লার দর নির্ধারণ করা হয় ক্যালোরিফিক ভ্যালু ৬২৩৩ ধরে। কিন্তু বাংলাদেশ যে কয়লা আমদানি করছে তার ক্যলোরিফিক ভ্যালু ৫০৫০। সঙ্গত কারণে দেশে আমাদানি করা কয়লার দাম কিছুটা কম পড়বে।

এলপিজির ক্ষেত্রে এসে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিহাসের সর্বোচচ দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে এখন। সৌদি এ্যারামকো বলছে এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন প্রপেন বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ ডলারে আর বিউটেন বিক্রি হচ্ছে প্রতিটন ৬৫৫ ডলারে। এই দর গত আগষ্ট থেকে যথাক্রমে ৪০ ও ৩৫ ডলার বেশি। গত জানুয়ারিতে সৌদি সিপি অনুযায়ি প্রপেন এর দাম ছিল টনপ্রতি ৫৫০ ডলার আর বিউটেনের দাম ছিল ৫৩০ ডলার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.