নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড কর্তৃক সরবরাহকৃত এলপিজির মুল্য নির্ধারণের দায়িত্ব বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। একইসঙ্গে সরকারি এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার কেবল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (ইআরসি) রয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার ইআরসি চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ৭ সেপ্টেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে বিইআরসির সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এলপি গ্যাস লিমিটেডের কর্তৃক সরবরাহ করা এলপিজির মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি বিইআরসির আওতা বর্হিভুত রাখার কথা বলা হয়েছে।
ক্যাবের চিঠিতে বলা হয়েছে, এলপিজিসিএলের এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করা দায়িত্ব বিপিসিকে দেওয়া এবং প্রদত্ত পত্রটি দ্বারা ইআরসির এখতিয়ার বহির্ভূত রাখতে বলায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ইআরসি আইনের ২২(খ) উপধারা লংঘন করেছে। ফলে ওই আইনের ৪২ ধারা মতে আইন লংঘনের দায়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, তাতে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করা হয়েছে। ফলে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত।
চিঠিতে জ্বালানি বিভাগ চলতি মাসে ৭ সেপ্টেম্বর ইআরসিকে দেওয়া পত্র অনতিবিলম্বে বাতিল বা প্রত্যাহার করাসহ ছয়টি অনুরোধ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে— ইআরসির আইন সংশোধন করে এলপিজিসহ পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহের মূল্য নির্ধারণ ইআরসির এখতিয়ার বহির্ভূত রাখার তৎপরতা বন্ধ করা এবং এই আইন সংশোধন না করা, ইআরসি আইনের ২২(খ) উপধারা মতে গণশুনানির ভিত্তিতে পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহের মূল্য নির্ধারণ করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে ইআরসিকে জানানো, জ্বালানি খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সংস্থাটির হিসাব নিকাশ কম্পট্রোলার অডিটর জেনারেলের মাধ্যমে অডিট করানো, এলপিজিসিএলের এলপিজির ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলার চার্জ গণশুনানির মাধ্যমে নির্ধারণ করা এবং সরকারি এলপিজি স্বল্প মূল্যে বস্তিবাসী ও স্ট্রিট ফুড ভেন্ডরদের মধ্যে বিতরণের অনুরোধ জানানো হয়।
ক্যাবের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এলপিজি অপারেশনাল লাইসেন্সিং নীতিমালা ২০১৭ এর ৩.১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘এলপি গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সরকার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনাক্রমে এলপি গ্যাসের খুচরা মূল্য নির্ধারণে পদ্ধতি প্রণয়ন করিবে।’ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি আইন, ২০০৩ এর ২২(খ) উপধারা অনুযায়ী পেট্রোলিয়াম পদার্থের ট্যারিফ নির্ধারনের বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ার। এই নীতিমালার ৩.১ অনুচ্ছেদ এবং বিইআরসি আইনের ২২(খ) উপধারা এই দুই বিধানের আওতায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বিইআরসিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত এলপিজির ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করতে বলে। কিন্তু জ্বালানি বিভাগ এলপিজির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি তৈরি না করায় এবং বিইআরসি প্রণীত প্রবিধানমালাসমূহ আইন মন্ত্রণালয়ে না পাঠিয়ে ২০১২ সাল থেকে আটকে রাখায় ওই পত্র মতে বিপিসি এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করতে পারেনি।
এতে আরও বলা হয়, ক্যাব কর্তৃক দায়েরকৃত রিট মামলায় উচ্চ আদালত ইআরসিকে এলপিজির মূল্য নির্ধারণের আদেশ দেন। কিন্তু উল্লিখিত নীতিমালায় এলপিজির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি তৈরি না হওয়ায় বিইআরসি আদালতে আদেশ প্রতিপালন করতে পারেনি। বিইআরসির এই যুক্তি আদালত গ্রহণ করেননি। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আদালত অবমাননার মামলা করে ক্যাব। পরবর্তীকালে আদালতের আদেশে এলপিজিচর মূল্য নির্ধারণ করে। সরকারি কোম্পানি এসপিজিসিএল তা কার্যকর করলেও অন্যরা তা করেনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে যারা বিইআরসির আদেশ কার্যকর করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ক্যাব আবেদন করলেও অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়ায় উচ্চ আদালতে এই অভিযোগ পেশ করা হয়। যা এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
Be the first to comment