নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, এখন আমাদের চাহিদা কম। কিন্তু গরমের সময় আমাদের সর্বোচ্চ চাহিদা কত তার উপর নির্ভর করে আমাদের ক্যাপাসিটি রাখতে হবে। সে হিসেবে এখন আমাদের ২০ হাজার মেগাওয়াট ক্যাপাসিটি থাকা দরকার। এছাড়া জ্বালানি বিষয়টিও আমাদের চিন্তা থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশে এখন উবার চলে। যার গাড়ি দরকার সে ব্যবহার করে। একইভাবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে আমরা নো ওয়ার্ক নো পেমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।
আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কুইক রেন্টাল: অতীত, বর্তমান ও ভবিষৎ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিপপা) এর সহযোগিতায় ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) ওয়েবিনারটি আয়োজন করে।
উপদেষ্টা বলেন, ’৭১ সালে আমাদের গড় আয় ছিল ১০০ ডলার। তখন পাকিস্তানে ছিল ২০০ ডলার। বঙ্গবন্ধু তিন বছরে এটিকে ২০০ ডলারে নিয়ে গিয়েছিল। পরের ১৩ বছরের সেটি আবার কমে যায়। তিনি বলেন, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্পেশাল ইপিজেড করা হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুতের অনেক চাহিদা রয়েছে। এখন যা চাহিদা তার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির। কিন্তু সামনে শিল্পে চাহিদা আরো বাড়বে। এছাড়া এখন যারা ক্যাপটিভ ব্যবহার করছে তাদেরও আমরা গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিতে উৎসাহিত করছি। এখন জরুরি অবস্থা না হলেও যেকোনো সময় সেটা আসতে পারে।
পিডিবির সদস্য মাহবুবুর রহমান জানান, এখন দেশে যে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে তা থেকে আমরা ২৭৪ মেগাওয়াট এবং কুইক রেন্টাল থেকে ৩৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা পাচ্ছি। এই কেন্দ্রগুলো ২০২৪ সালে অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কোনো রকম ক্যাপাসিটি কস্ট ছাড়া যদি এগুলো রেখে দেওয়া যায় তাহলে সরকার লাভবান হবে। তিনি বলেন, রেন্টালগুলো সব গ্যাসভিত্তিক আর কুইক রেন্টালের কিছু গ্যাস কিছু ফার্নেস অয়েলচালিত। যেহেতু আমাদের এখন বেশি দামে জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে সেহেতু আমদানি করা জ্বালানির তুলনায় এই বিদ্যুতের দাম কম পড়বে। জ্বালানির দাম যদি আরো বাড়ে তাহলে আমরা এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারি। জরুরি প্রয়োজনের সময় কেন্দ্রগুলো কাজে আসতে পারে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন বলেন, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমাদের জিডিপিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জরুরি প্রয়োজনে ২০০৯ সালের পর থেকে এই কেন্দ্রগুলেঅ অনিবার্য ছিল, এখন আর অনিবার্য নেই। তবে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের লাভ হবে কিনা তা বিবেচনা করতে হবে। তবে রাখার ক্ষেত্রে এটি আর রেন্টাল হিসেবে থাকবে না। দামের কথা চিন্তা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা এটি নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
সিপিডির গবেষক গোলাম মোয়অজ্জেম বলেন, সরকার যে পরিস্থিতিতে দ্রুত বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ আইন করেছিল তা সঠিক ছিল। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ফলে এখন আইনের প্রয়োজনীয়তাও নেই। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা ব্যবসা করেছেন। এখন তাদের আর রাখার কোনো যুক্তি নেই।
বিআইডিএস এর সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে বিনিয়োগ করা হয়েছিল তা এতদিনে উঠে এসেছে। ফলে যদি কোনো কেন্দ্রের অর্থনৈতিক উপযোগিতা থাকে তাহলে সেগুলো রেখে দিতে হবে। এতে সরকার লাভবান হতে পারে। প্রয়োজনে আইপিপি হিসেবে কেন্দ্রগুলো রেখে দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
পিডিবির চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বলেন, এখন যে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের পরিকল্পনা যে আমরা করেছি তার মধ্যে এখন ১৪ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু খুব বেশি নয়। প্রতি ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য কমপক্ষে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা থাকতে হবেই। সে হিসেবে এখন আমাদের রিজার্ভ বিদ্যুৎ কমই আছে। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সোলার পাওয়ারের কথাই আসে। যা দিনের বেলা পাওয়অ যায়। ফলে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি থাকা দরকার। কিন্তু স্টোরেজ ক্যাপাসিটি কষ্ট অনেক বেশি। যা ডিজেল চালিত বিদ্যুতের চেয়েও বেশি। ফলে সে তুলনাটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।
এফইআরবির নির্বাহি পরিচালক শামীম জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিপপার সভাপতি ইমরান করিম, সহ সভাপতি নাভিদুল হক, এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুন কর্মকার।
Be the first to comment