নিজস্ব প্রতিবেদক :
জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করে কার্বন দুষণ নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য অর্জনে মানসম্মত বৈদুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। কেননা কেবলমাত্র আবাসিক খাতেই ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় যার বড় অংশ সাশ্রয় করা সম্ভব এর দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে। এর জন্য ভোক্তা, উৎপাদন ও সরকার এই ত্রিপক্ষীয় আস্থা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। স্রেডা, বিএসটিআই ও অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ডকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে মান চূড়ান্তকরণ ও স্টার লেবেলিং দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কেবল দেশে উৎপাদিত পণ্য নয়, আমদানিকৃত পণ্য নির্ধারিত মান ছাড়া দেশীয় বাজারে বিপণন নিষিদ্ধ করতে হবে। নকল পণ্য উৎপাদন বন্ধসহ গ্রেমার্কেট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিএসটিআইকে মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের জনবল বৃদ্ধি ও কারিগরি সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড প্রোডাক্টস লেবেলিং শীর্ষক এনার্জি এন্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
স্রেডা ও জিআইজেডের সহায়তায় ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন সাসটেনেবল অ্যান্ড রিনিয়েবল এনার্জি ডেভলপমেন্ট অথরিটির (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসটিআইয়ের স্টান্ডার্ড বিভাগের উপপরিচালক রহিমা তালুকদার। আলোচনা করেন এনার্জিপ্যাক ইলেক্টনিক্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আকতার, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চিফ বিজনেস অফিসার জনাব আনিসুর রহমান মল্লিক, ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোহাম্মদ সাহেরুল আজম এবং জিআইজেড এর আইইইপি ২ প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার আল মুদাবির বিন আনাম।
মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার অর্জন দ্বিগুণ করার জন্য স্রেডা এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার যে কার্বন দুষণ রোধে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে এর পুরোপুরি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এরজন্য বাতি, ফ্যান, এসি, ফ্রিজ এর মতো পণ্যের মান নির্ধারণ এবং লেবেলিং এর মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা দরকার। স্রেডা এটার জন্য প্রবিধানের খসড়া চূড়ান্ত করেছে এবং তা বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আমরা ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডের কারখানায় এনার্জি অডিট করে জেনেছি তাদের এলইডি বাতি আন্তর্জাতিক মানের। সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পণ্যে স্টার লেবেলিং করার পাশাপাশি আমদানি পণ্যেও জন্যও এটা নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে বিএসটিআই তাদের মান নির্ধারণ করা পণ্যে লেবেলে কিউআর কোড চালু করতে যাচ্ছে। যাতে কেনার সময় যেকোনো ভাক্তা সেল ফোনের মাধ্যমে স্ক্যান করে মান যাচাই করে নিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, স্রেডা এককভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। সম্মিলিতভাবে সকল পক্ষ মিলে জনসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। আমরা আশা করি স্রেডা আগামী দিনে ভোক্তাদের সকল চাহিদার পক্ষে পুরোপুরি কাজ করতে সক্ষম হবে।
শামসুল আলম জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের জন্য পণ্যমান নিশ্চিত করতে হলে কেবলমাত্র ভোক্তাদের সচেতন করলে হবে নাÑ নীতি নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারী সকলকে সচেতন করতে হবে। তিনি সরকারি টাকায় নিম্নমানের সিএফএল বাতি কেনার সমালোচনা করে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। তিনি মনে করেন, স্রেডাকে কেবল দায়িত্ব দিলেই হবে না কাজের জন্য আইন প্রণয়ন করে স্রেডাকে স্বাধীন রেগুলেটর বানাতে হবে।
এ টি এম মোস্তফা কামাল বলেন, ইনক্যানডোসেন্ট বাল্ব থেকে সিএফএল, টিউব লাইট হয়ে এখন এলইডি বাল্ব এসেছে। আলো বেশি, দাম কম এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় এমনিতেই জনপ্রিয় হয়েছে। এছাড়া এলইডি বাল্ব টেকেও অনেক বেশি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য চিহ্নিত করতে স্টার দেয়া হয়। চীন, মালয়শিয়ায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহারে তাৎক্ষণিক প্রণোদনা দেওয়া হয়। ধরা যাক কেউ একটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী রাইস কুকার কিনলেন তিনি তাৎক্ষণিক ৫০০ টাকা দাম কম দিবেন। বিক্রেতা পরে সরকারের কাছ থেকে এ অর্থ পেয়ে যাবেন। আমাদের তেমনিভাবে মানুষকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এছাড়া বাজারে থাকা পণ্যগুলো কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।
মুল প্রবন্ধে রহিমা তালুকদার বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এনার্জি স্টার মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এনার্জি এফিশিয়েন্সি অনুযায়ী স্টার রেটিং দেওয়া হবে।
Be the first to comment