ডিজেলের দাম না বাড়ানোর কোনো বিকল্প ছিলো না: জ্বালানি সচিব

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ছিল রাজনৈতিক। আমলারা এতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাছাড়া ডিজেলের দাম না বাড়ানোর কোনো বিকল্পও ছিলো না।’
আজ বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিনিয়র সচিব। এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকারের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শামীম জাহাঙ্গীর।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি এ কে এম হাতেম, সিপিডির পরিচালক (গবেষণা) খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিজেএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ। সেমিনারে এফইআরবির সদস্যসহ জ্বালানি সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন ও মতামত তুলে ধরেন।

সেমিনারে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের সামনে ডিজেলের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না। আমরা ছয় মাস পর্যবেক্ষণ করে বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে সঙ্গে সঙ্গে কমিয়ে আনা হবে। তবে পরিবহণ কিংবা অন্য ক্ষেত্রের দাম কমবে কি না সে দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না। দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ম্যাক্রোইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অবশ্যই আছে, আমি এর সঙ্গে দ্বিমত করি না।’

সিনিয়র সচিব বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন, পেট্রোল-অকটেনের দাম বাড়িয়ে লোকসান সমন্বয় করা যেতো। তাদের উদ্দেশে বলছি, মোট জ্বালানি তেলের ৭৩ শতাংশ ডিজেল আর পেট্রোল-অকটেন ব্যবহার হয়ে ১০.৮২ শতাংশ। পেট্রোল অকটেনে ৪০ টাকা করে বাড়ালেও এই মূল্য সমন্বয় করা যেতো না। আর কেরোসিনের দাম না বাড়ালে ভেজাল মেশানোর একটি সম্ভাবনা থেকে যেতো। গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছি না। বাড়াতে হলে বিইআরসিতে যেতে হবে।’

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, এককভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানোর এখতিয়ার নেই বিপিসির। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি সরকারের সিদ্ধান্ত। বিপিসি শুধু এটা বাস্তবায়ন করেছে। গত কয়েক বছরে যে মুনাফা করেছে বিপিসি সেই টাকা দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। শুধু এসপিএম বাস্তবায়ন হলে মাসে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরাও জ্বালানি তেলের একজন গ্রাহক। তেল বেড়েছে, গ্যাসের দাম চার-পাঁচ গুণ বেড়েছে, কয়লার দামও বেড়েছে পাঁচ গুণ। সবকিছু একসঙ্গে জাতির কাঁধে ভর করেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি ২৫ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি ২৫ হাজার কোটি টাকা। ১১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এ সময় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৬.৬১ টাকা। আর বিক্রয় করা হয়েছে ৫.১২ টাকা করে। ইউনিট প্রতি ভর্তুকি দিতে হয়েছে ১.৪৯ টাকা।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ‘ডিজেল নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে তাই পেট্রোল-অকটেনের তুলনায় কম রাখার দর্শন কাজ করতো। আমরা কি সেই দর্শন থেকে বের হয়ে আসতেছি!’

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি এ কে এম হাতেম বলেন, ‘সময়টা সঠিক হয়নি। এই সিদ্ধান্তের কারণে সারা দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। বিশ্ববাজারে অসম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের।’

সিপিডির গবেষক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও আরও অনেক বিকল্প হতে পারতো। সরকারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি ভুল হয়েছে

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.