জ্বালানি খাতকে আমলা এবং কার্বনমুক্ত করার আহ্বান

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শীর্ষ পদ আমলা-নির্ভর হয়ে গেছে। এসব পদে টেকনিক্যাল লোকবল না থাকায় যথা সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত আসছে না। বোর্ডগুলোতে টেকনিক্যাল লোকের সংকট থাকায় সঠিক মতামত দিতে পারছে না। যে কারণে এসব বোর্ড থেকে আমলাদের সরিয়ে দেওয়া জরুরি। এ কারণে জ্বালানি খাতকে আমলা এবং কার্বনমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাব। পাশাপাশি সরকারের যেকোনেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করার কথাও বলা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে জ্বালানি অধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে ক্যাব প্রণীত প্রস্তাবিত ‘জ্বালানি রূপান্তর নীতি’র ওপর নাগরিক মতবিনিময় সভায় ক্যাবের পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া। আরও বক্তব্য রাখেন— ক্যাবের সিনিয়ন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজ ও ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ক্যাবের ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি- বেলা’র সিইও অ্যাডভোকেট সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. কুদরত-ই-খুদা।

সভায় বক্তারা বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্যাব এবং দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি তুলছে। এরা জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে সৌর শক্তি ব্যবহারের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে সৌর শক্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এর পর রাতের বেলা সৌর শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে ধরে রেখে ব্যবহার করা গেলেও তাতে আকাশচুম্বি দাম পড়ে যায়। ফলে এখনই ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করা সবার জন্য সমীচীন হবে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না।

শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে আমলা এবং কার্বনমুক্ত করতে হবে। আমলারা দেশের সবগুলো বিদ্যুৎ কোম্পানিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে যারা কোম্পানির অনিয়ম এবং দুর্নীতি ঠেকাবেন, তারাই কোম্পানির দায়িত্বে রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসতে হবে। এজন্য সৌর বিদ্যুতের ওপর জোর দিতে হবে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ছে। এ দামকে কেন্দ্র করে আমাদের দক্ষতা, সক্ষমতা এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে ভোক্তারা ভুগছেন। বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধি চরম অবস্থায় চলে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। জ্বালানি জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছে। কঠিন সমস্যা তৈরি হয়েছে। সবকিছুতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে সরকারকে চিন্তা করতে হবে।’

মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের সামর্থ্য নির্ভর করে বিদ্যুৎ জ্বালানির ওপরে। এ জন্য একটি সুষ্ঠু জ্বালানি নীতি অপরিহার্য। ১৯৯৫ সালে জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করে, ২০০৪ সালে তা সংশোধিত হলেও অনুমোদিত হয়নি। এ খাতের উন্নয়ন ও পরিচালনায় সরকারের নীতিগত অবস্থান সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন, ক্ষেত্রবিশেষে পরিপন্থী বলে মনে হয়।’

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। একেবারে হয়তো কমানো সম্ভব হবে না। তবে ধাপে ধাপে এর ব্যবহার কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘রেগুলেটরি কমিশনের ভোক্তাদের কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে। ভোক্তারা তাদের অধিকারের নানা বিষয়ে কমিশনের কাছে জানতে চাইবে এবং প্রশ্ন করবে।’

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে ক্যাব। এছাড়া নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে ক্যাব। কিন্তু এ কাজ করার কথা ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং সরকারের।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.