নিউজ ডেস্ক :
নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধান ও ব্যবহারে ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে দেশের আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলপিজি পুরোটাই আমদানি নির্ভর এজন্য তাতে প্রভাব আরো বেশি। ইউক্রেন সংকট জ্বালানি সরবরাহে কোনো প্রভাব না ফেললেও তেল ও গ্যাসের দাম বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলপিজির দামে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এলপিজির দাম বৃদ্ধির প্রভাব ভোক্তাদের উপর চলতি মাস থেকেই পড়তে শুরু করেছে।
আজ শনিবার (৫ মার্চ) এনার্জি এন্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত “ইউক্রেন ক্রাইসিস: ইমপ্যাক্ট অন কুকিং ফুয়েল এন্ড ওয়ে আউট” শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রান্নার কাজে জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের স্বাধীনতা মানে যার যেমন ইচ্ছা পাইপ লাইন গ্যাস, এলপিজি, বিদ্যুৎ বা অন্যান্য ব্যবহারের সুযোগ নীতিগতভাবে নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, বক্তারা মনে করেন, এলপিজির আমদানি দাম ৭০০ ডলারের বেশি হলে সাবসিডি দিয়ে এবং আপাতত ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে তা ভোক্তাদের জন্য সহনীয় করার নীতি নেওয়া যেতে পারে। তবে সকলেই মনে করছেন, উচ্চ জ্বালানি দামের চাপ কমাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে রান্নায় জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে এনার্জি এন্ড পাওয়ারের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ইঞ্জি খন্দকার আবদুস সালেক, বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই এলাহী চৌধুরী, বুয়েটের সাবেক প্রফেসর ড. ইজাজ হোসেন, বিইআরসির সাবেক সদস্য আবদুল আজিজ খান, সাসটেনেবল এন্ড রিনিয়েবল এনার্জি অথরিটির সদস্য (পলিসি এন্ড রিসার্স) সালিমা জাহান, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের হেড অব ডিভিশন ইঞ্জি জাকারিয়া জালাল।
বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বর্তমান সঙ্কটে জ্বালানির মূল্য অস্থির হয়ে পড়েছে। জ্বালানি নির্ভর বর্তমান পৃথিবীতে জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে সমস্যাগুলো আমাদের সামনে এসেছে তা হলো- জ্বালানির বর্ধিত মূল্য, জ্বালানি প্রাপ্যতা এবং জ্বালানি সরবরাহ। বর্তমানে সরবরাহে তেমন ব্যাঘাত ঘটেনি। অর্থাৎ জ্বালানি সরবরাহে সমুদ্র পথ অবশ্যই নিরাপদ রাখতে হবে। তবে কোনো কারণে বর্তমান জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কিভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। জ্বালানি চাহিদা যদি আরও বেড়ে যায় তাহলে মূল্য আরও বেড়ে যেতে পারে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, এলপিজির দাম সহনীয় রাখতে সাময়িকভাবে ট্যাক্স কমান যেতে পারে। তবে ভ্যাট ১৫ ভাগ থেকে ৭ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে জরুরি বিষয় হলো ৭৭ ভাগ ব্যবহারকারীদের কিভাবে ক্লিন জ্বালানি সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করা।
আবদুস সালেক সূফি বলেন, উত্তর গোলার্ধে শীতের কারণে জ্বালানির চাহিদা এবং মূল্য দুইই বেড়ে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তা আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
সৌদি আরামকোর সর্বশেষ কন্ট্রাক্টক প্রাইস অনুসারে এলপিজির দাম আগের মাসের তুলনায় ২০০ ডলার বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় বাজারেও তা প্রভাব পড়েছে। মার্চে প্রতিটি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫১ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রুড অয়েলের মূল্য ১১৩ ডলার। ফলে আগামী মাসে দেশীয় বাজারে আবারো এলপিজির দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।
মকবুল ই এলাহী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে স্পট মার্কেট থেকে বেশি দামে এলএনজি কেনা। তবে সিস্টেম লস কমিয়ে তা মোকাবেলা করা যায়। বর্তমানে বিদ্যুতে সিস্টেম লস ১০ ভাগ, এক সময় তা ছিল ৪৭ ভাগ। বাসাবাড়িতে খুব দ্রুত প্রিপেইড মিটার বসাতে হবে।
ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বর্তমানে তেল এবং গ্যাস দুইটারই মূল্য একসঙ্গে বাড়ছে। আগে এমনটা দেখা যায়নি। এধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটা বিশেষ তহবিল রাখা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে এলপিজি কিন্তু পরিবহন খাতেও ব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে।
জাকারিয়া জালাল বলেন, রান্নার জন্য এলপিজি ছাড়া বিকল্প জ্বালানি আসলে তেমন নেই। ২০০৭, ২০১৪ সালেও এলপিজির মূল্য বেড়েছিল। এবারও সারাবিশ্বের যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে, জ্বালানির মূল্য বাড়তেই থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য যা থাকবে তা দিয়েই আমাদের এলপিজি কিনতে হবে। বাল্ক এলপিজির সরবরাহ পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে এলপিজি আমদানিতে ভ্যাট ৭ শতাংশ ধার্য আছে। সাময়িক ভাবে তা মওকুফ করা যেতে পারে।
Be the first to comment