পাইকারি বিদ্যুতের দাম যেমন ছিল তেমন রাখার সুপারিশ

রশিদ মামুন:
পাইকারি বিদ্যুতের দাম যেমন ছিল তেমনই রাখার সুপারিশ করেছে এনার্জি রেগুলেটরি (ইআরসি) গঠিত কারিগরি কমিটি।

আজ বুধবার ঢাকায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির গণশুনানিতে কারিগরি কমিটি এখনকার ৫টাকা ১৭ পয়সা রাখার সুপারিশ করেছে। তবে সরকার যদি কোন রকম ভর্তুকি না দেয় সেক্ষেত্রে প্রায় ৫৭ ভাগ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার বিদ্যুৎখাতে আর ভর্তুকি দেবে না এমন কোন আদেশ যেহেতু জারি করেনি তাই পাইকারি বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

শুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মকবুল ই ইলাহি, আবু ফারুকসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এখন পিডিবির পাইকারি বিদ্যুতের দাম আছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা। পিডিবি এই দাম ৬৬ ভাগ বাডিয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে ইআরসির কারিগরি কমিটি এই দাম ভর্তুকি দিলে আগের দাম অর্থাৎ ৫ টাকা ১৭ পয়সা এবং ভর্তুকি না দিলে ৮ টাকা ১৬ পয়সা করার সুপারিশ করেছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আলোচনার মধ্যে পিডিবি এই প্রস্তাব দেয়। তবে গ্যাসের দাম না বাড়াতে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন অনেকে।

শুনানিতে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুর আলম বলেন,৬% নতুনভাবে আরোপ করা না হলে, তেলে শুল্ক-করাদি অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা না হলে, কয়লার ওপর ৫% ভ্যাট নতুনভাবে আরোপিত না হলে, ব্যক্তি খাতের পরিবর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তেল বিপিসি’র মাধ্যমে আমদানি হলে মোট ৮ হাজার ৮৩৩ কোটি ঘাটতি কমবে।

অবৈধভাবে নির্ধারিত ডিজেল ও ফার্নেসওয়েলের বর্ধিত মূল্য এবং কুইক রেনটালের বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ক্রয়কৃত মূল্য পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহারে সমন্বয় না হলে ঘাটতি কমবে ১৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।
১৩২ কেভি থেকে তদুর্ধের ভোল্টেজ লেভেলের ভোক্তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ভর্তুকিযুক্ত হলে এবং বিতরণ ইউটিলিটি ভেদে তা অভিন্ন হলে পিডিবি’র আয় বাড়বে অর্থাৎ ঘাটতি কমবে ১৩২৮ কোটি টাকা।
দেশের ১৯টি পিবিএস-এ ভোক্তা মিশ্রণ পিডিবি, ডেসকো, ও ডিপিডিসি’র সমতুল্য। তাদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বাজ মূল্যহার যৌক্তিক করা হলে সাশ্রয় হবে ৩৫৫৬ কোটি।

তাছাড়া পিডিবি’র কম্বাইন্ড সাইকেল প্লান্টসমূহ ৫৩% এর পরিবর্তে ৬৭% পিএফ-এ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে সাশ্রয় হবে ১৫ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা।
ফার্নেসওয়েলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন পিডিবি’র ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তন্মধ্যে লসে আরইবিকে বিদ্যুৎ দেয়ায় ঘাটতি বৃদ্ধি পায় ২০ হাজার কোটি টাকা। আরইবির ঘাটতিসহ মোট ঘাটতি ওপরের বর্ণনা মতে অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় হলে ৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। মূল্যবৃদ্ধি কিংবা ভর্তুকি প্রদানের প্রয়োজন হবেনা।

পিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে।২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে পিডিবির।

কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্ন উঠতে পারে গ্যাসের দামের গণশুনানির ঘোষণা না দিয়ে কেনো আমরা বিদ্যুতের দামের শুনানি নিচ্ছি। আপনারা জানেন দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সরকারের পলিসি সিদ্ধান্তের বিষয় থাকে, সেটি দালিলিকভাবে প্রমাণের বিষয় থাকে। সেটার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। শেষ হলে গ্যাসের দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কমিশন তার আইনি প্রক্রিয়াগত কারণে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় প্রস্তাবের উপর গণশুনানি নেওয়া হচ্ছে। পাইকারি দাম ঘোষণা হলে খুচরার ওপর প্রভাব পড়বে। তাদের কোন প্রস্তাব আমরা পাইনি।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

##

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*


This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.