
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য জ্বালানি সনদ চুক্তি (এনার্জি চার্টার ট্রিটি বা ইসিটি) সইকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজ রাজধানীতে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করে আসা সংগঠন কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত এক সেমিনারে এ বক্তব্য উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, আইইসি সচিবালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে আইইসি সই করে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হয়েছে। ২০১৯ সালে এই সচিবালয়ের এক কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের বরাতে জানা যায়, বাংলাদেশ আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক ইসিটি সইয়ের প্রায় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে। অবশ্য ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারিতেই আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অষ্টম আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশ এই চুক্তিতে যেকোনো সময় স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত।
৫০টি ধারা নিয়ে প্রণীত ইসিটি মোট আট ভাগে বিভক্ত। মোটাদাগে চারটি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এর আইনি কাঠামো। সেগুলো হলো: (১) স্বদেশি-বিদেশিনির্বিশেষে সমাচরণ (ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট); ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ বাণিজ্যনীতির ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা; (২) বিভিন্ন জ্বালানি উপাদান, পণ্য, সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিকে পাইপলাইন, গ্রিডের মাধ্যমে বা অন্যান্য উপায়ে স্থানান্তর ও পরিবহন; (৩) আন্তরাষ্ট্রীয় ও স্বাগতিক রাষ্ট্র বনাম বিদেশি বিনিয়োগকারী দ্বন্দ্ব নিরসন; (৪) অধিক কার্যকরভাবে জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত এবং জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারের কারণে পরিবেশগত ঝুঁকি হ্রাস।
জ্বালানি সনদ চুক্তিটির ধারা ১৮ চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের জ্বালানি সম্পদের ওপর তার সার্বভৌমত্ব ও অধিকারের নিশ্চয়তা দিলেও এর ঘোষণাপত্রটি বিপরীত কথা বলে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সার্বভৌমত্ব নীতিটি যেন চুক্তির অন্য বিধান প্রয়োগে অন্তরায় না হয়। একইভাবে চুক্তির ধারা ৫, ১১ ও ১৪ অনুযায়ী, কোনো স্বাগতিক রাষ্ট্রেই বিদেশি বিনিয়োগকারীকে তাদের নিজস্ব কোনো পণ্য ব্যবহারে বাধ্য করার অধিকার রাখে না। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় কাউকে কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও স্বাগতিক রাষ্ট্র বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিতে পারে না। অথচ, বিনিয়োগকারী ব্যবসার পুঁজি, মুনাফা, উদ্বৃত্ত অর্থ, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিভিন্ন রকম পারিশ্রমিক, উপহার ইত্যাদি বিনা বাধায় নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আইনগত অধিকার রাখে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে বা হঠাৎ করে কোনো কারণে অথবা বর্তমান শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বিদেশি বিনিয়োগ বা বিনিয়োগকারীর ওপর কোনো কর ধার্য করলে কিংবা ভিন্ন কোনো অবস্থান নিলে, সেই প্রতিষ্ঠান স্বাগতিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার আইনগত অধিকার রাখে। এমন মামলার উদাহরণও আছে। জ্বালানির দাম কমানোয় ব্যবসায়িক ক্ষতি হওয়ায় ব্রিটিশ সাবসিডিয়ারি অ্যাপ্লাইড এনার্জি সার্ভিসেস (এইএস) স্বাগতিক রাষ্ট্র হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে (আইসিএসআইডিতে) ক্ষতিপূরণ মামলা করে। এর রায় স্বাগতিক রাষ্ট্রের পক্ষে গেলেও আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের খরচ উভয় পক্ষকেই সমভাবে বহন করতে হয়। রায় স্বাগতিক রাষ্ট্রের বিপক্ষে গেলে এই ব্যয় নিঃসন্দেহে কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
সেমিনারে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বক্তব্য রাখেন।
Be the first to comment