নিজস্ব প্রতিবেদক :
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে (আরইবি) চলছে অস্থিরতা। চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে গত সরকারের শেষ দিকে এসে আন্দোলনে নামে আরইবির অস্থায়ি ৪৫ হাজার কর্মচারী। অন্তবর্তী সরকারের শুরুতেই একই দাবিতে সোচ্চার হয়েছে তারা। এতে সারাদেশে আরইবিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় আরইবির সকল স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আরইবির কর্মচারীদের পক্ষে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সারাবছর রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন ও ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সকল অনিয়মিত/চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ০২ দফা দাবি আদায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল ও গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারাদেশে একযোগে গত ০৫ মে, ২০২৪ তারিখ থেকে টানা ৩৫ দিন কমবিরতির ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে দাবি পেশ করা হয়। সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় পুনরায় ০১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ থেকে টানা ১০ দিন কমবিরতির ফলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং গত ১ আগস্ট আরইবি, সমিতি এবং মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই তারিখে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় সমিতির দুজন জন জিএম এবং চার জন ডিজিএম-কে শান্তি/হয়রানীমূলক বদলির দপ্তরাদেশ করে আরইবি (ইতিপূর্বে আন্দোলনের কারণে ১০ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীকে সংযুক্ত/বরখাস্ত করা হয়)। উক্ত আদেশ স্থগিত করার জন্য সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়, এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক মৌখিক নির্দেশনা সত্ত্বেও আরইবি কর্তৃক তা বাতিল/স্থগিত করা হয়নি।
দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গত ৬ আগস্ট বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করে পুনরায় দপ্তরাদেশ জারি করে। ফলশ্রুতিতে গত গত ৮ আগস্ট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ২২ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী “লং মার্চ’টু আরইবি” কর্মসূচি করেন এবং সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় মন্ত্রণালয়য়ের রিফর্ম কমিটির প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত আরইবি ০৬ টি সিদ্ধান্ত তাৎক্ষনিকভাবে বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আরইবির চেয়ারম্যান কর্তৃক পরবর্তী কর্মদিবসে কার্যবিবরণী প্রেরণের স্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ পুনরায় আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহনের খবর পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গত ২২ আগস্ট পূর্বগঠিত কমিটির সভা আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আরইবির সকল প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকেন। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ফলে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজমান থাকায় আরইবির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সমিতি থেকে সকল প্রকার তথ্য সরবরাহ তথা আরইবির সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
এমতাবস্থায়, আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পূর্ব ঘোষিত দুই দফা দাবি না মানলে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে স্টেশন ত্যাগপূর্বক অনির্দিষ্টকালের জন্য গণছুটি প্রয়োজনে গণপদত্যাগ কর্মসূচি পালন করবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।
এদিকে এমন কর্মসূচিতে সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কায় আরিইবি এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সকল স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
##
Be the first to comment